নোয়াখালী: নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও স্বদ্বীপ উপজেলার সীমান্তবর্তী গাংগুইডার চর এলাকায় বঙ্গপোসাগরের মোহনায় বাতাসের কবলে পড়ে একদিনেই লবনবাহী আটটি কার্গো ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ট্রলারে থাকা ৮০ জন শ্রমিকের মধ্যে ৭৭ জন জীবিত উদ্ধার হলেও জিল্লুর রহমান, খোরশেদ আলম ও রুবেল নামে তিনজন লবন শ্রমিক নিখোঁজ হয়।
পরবর্তীতে শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে হাতিয়ার গ্যাইসার চর এলাকায় জিল্লুর রহমানের মরদেহ পাওয়া যায়। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অপর দুই শ্রমিক। এ সময় ৪৫ হাজার মন লবনসহ আটটি কার্গো ট্রলার পানিতে তলিয়ে যায়। যার কোনো সন্ধান পায়নি মালিক পক্ষ।
ডুবে যাওয়া মালবাহি ট্রলারগুলোর মধ্যে রয়েছে- এমবি তামান্না আলী, এমবি আয়েশা, এমবি আবু তৈয়ব, এমবি সাবের, এমবি আল্লার দান, এমবি আমির, এমবি উম্মে হাবিবা ও এমবি তৌফিক এলাহী।
এমবি তামান্না আলী কার্গো ট্রলারের সারেং ফারুক জানান, গত মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে ৪৫ হাজার মন লবনবোঝাই করে আটটি কার্গো ট্রলার প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৫ নম্বর শাহ্ মিরপুর ঘাটে নোঙর করে। পরবর্তীতে বুধবার সকালে ১৫ নম্বর শাহ মিরপুর ঘাট থেকে পুনরায় ঢাকা, নারায়গঞ্জ ও খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের সন্দ্বিপ ও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ভাসান চরের পূর্ব-দক্ষিণ অংশে বঙ্গপোসগরের মোহনায় বাতাসের কবলে পড়ে ডুবচরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে অনেকটা মেঘনা নদীতে প্রবেশ করতে করতে আটটি কার্গো ট্রলারই ডুবে যায়। এ সময় প্রত্যেকটি ট্রলারে থাকা সারেং ও শ্রমিকসহ মোট ৮০ জনও নদীতে পড়ে যায়।
পরবর্তীতে আশপাশে থাকা মাছ ধরার ট্রলার ও অন্যান্য মালবাহী কার্গো জাহাজের লোকজনের সহযোগিতায় ৭৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ হয় জিল্লুর রহমান, খোরশেদ আলম ও রুবেল। পরবর্তীতে দুই দিন পর গ্যাইসার চর এলাকায় জিল্লূর রহমানের মরদেহ পাওয়া যায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত খোরশেদ ও রুবেল নিখোঁজ রয়েছে।
ফারুক আরও জানান, ঘটনার পর দিন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পাঁচজনকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাদের মধ্যে আবদুল মবিনের অবস্থা আশংকাজনক।
লবণ শ্রমিকদের সংগঠন চট্টগ্রাম বিভাগীয় জল পরিবহণ কার্গো ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন হোসেন জানান, গত ২৫ বছরে এ মোহনায় প্রায় সাড়ে ৪০০ লবনবাহী কার্গো ট্রলার ডুবেছে। ট্রলারের সারেং ও শ্রমিকসহ মৃত্যু হয়েছে শতাধিক। সর্বশেষ গত ২৮ মে এক সঙ্গে আটটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ৪৫ হাজার মন লবন পানিতে তলিয়ে যায়। যার মূল্য অন্তত দুই কোটি টাকা। এছাড়া আটটি কার্গো ট্রলারের মূল্য রয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। এভাবে ডুবতে ডুবতে বর্তমানে ৮৮টি লবনবাহী কার্গো ট্রলার রয়েছে। এভাবে ট্রলার কমতে থাকায় ঐতিহ্যবাহী এ ব্যবসায় কর্মহীন হয়ে পড়ছে শত শত শ্রমিক। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিদারুন দিনাতিপাত করছে। মৃত শ্রমিকদের পরিবার পরিজন পথে বসে গেছে।
সরকারিভাবে জল শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করে মৃত শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান এবং কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের প্রণোদনা ও কাজ দেওয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে কার্গো মালিকদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান এ শ্রমিক নেতা।
এ বিষয়ে হাতিয়া নলচিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ ফয়সাল জানান, ফাঁড়ি ইনচার্জ ছুটিতে থাকায় সঠিক তথ্য তিনি জানেন না। তবে ২৮ মে ২টি কার্গো ট্রলার ডুবির ঘটনা তিনি শুনেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তার জানা নেই।
কার্গো মালিক পক্ষ ও শ্রমিক নেতারা নিখোঁজ খোরশেদ আলম ও রুবেলের সন্ধান চেয়ে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।