Wednesday 04 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ইস্যুতে ইতিবাচক নির্বাচন কমিশন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২৫ ১৬:৩১

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।

ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, দলের নিবন্ধন ও প্রতীক ইস্যুতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বলেন, আশা করি, কমিশন শিগগিরই কোর্টের রায় বাস্তবায়ন করবে।

সোমবার (২ জুন) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনসহ পূর্ণ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘গতকাল সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতকে আগের অবস্থায়, নিবন্ধন ও প্রতীকসহ পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২০১৩ সালের আগে যেভাবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছিল, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার অন্যায়ভাবে সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা সেই অধিকার ফিরে পেয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, আমরা সে জন্য ফুল কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে রায় বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। দ্রুত রায় কার্যকর করবেন বলে বলেছেন। দেশ জাতি সবাই তাকিয়ে আছে। যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করে সে আশা করি।

হামিদুর রহমান আযাদ প্রতীকের বিষয়ে বলেন, ২০১৩ সালের আগের আমাদের যে অবস্থা ছিল, যেমন আমি নিজে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছিলাম। সে অবস্থায় ফিরে যেতে হবে।

২০১৬ সালে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক কোনো দলকে না দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক অর্ডারের কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতের রায় বড় না নাকি প্রশাসনিক অর্ডার বড়?

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতীক ও নিবন্ধন দুটোর বিষয়েই কমিশন ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ থেকে পরবর্তী প্রায় সবগুলো নির্বাচনেই দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিল জামায়াত। এরপর ওয়ান-ইলেভেন সরকার রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিধান চালু করে। ২০০৮ সালে নিবন্ধন পায় জামায়াতে ইসলামী। নিবন্ধিত দল হিসেবে ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুটি আসনে জয় পায় দলটি।

তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। তাদের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে রিটে উল্লেখ করা হয়।

এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি হয়। নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুইবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুইবার গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় জামায়াত। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।

এরপর ২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন) ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের (১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

তবে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন। এ রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। ওই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। জামায়াতের আইনজীবীর অনুপস্থিত থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

গত বছর আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১ আগস্ট সরকার অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আন্দোলন চলাকালীন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর গত ২৮ আগস্ট সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে নির্বাহী আদেশ বাতিল করে।

সংগঠন হিসেবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটে দলটি। এরপর ইতোপূর্বে খারিজ হওয়া আপিলটি পুনরুজ্জীবনের (রিস্টোর) জন্য আবেদন করা হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য পুনরুজ্জীবনের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে দলটি। গত বছর ৩ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। গত ১৪ মে চতুর্থ দিনের মতো শুনানি শেষে মামলার রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করা হয়।

সে অনুযায়ী রোববার (১ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আপিল মঞ্জুর করেন। ফলে জামায়াত তাদের নিবন্ধন ফেরত পায়। আদালতের আদেশে বলা হয়, দলটির ক্ষেত্রে পেন্ডিং (অনিষ্পন্ন) গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন ইস্যু এবং অন্য কোনো ইস্যু যদি থেকে থাকে, তা সাংবিধানিক ম্যান্ডেট পুরোপুরি প্রয়োগ করে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেওয়া হলো।

রায়ের পর জামায়াতের আরেক আইনজীবী শিশির মনির ও নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন, জামায়াতের নিবন্ধন বৈধ বলে গণ্য হলো এবং দলটি নিবন্ধন ফেরত পেলো।

তবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে দুজন দুরকম বক্তব্য দেন। রায়ের পর জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, হাইকোর্টের যে রায় ছিল এই রায়কে বাতিল ঘোষণা করেছেন। ইলেকশন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন এবং অন্য যেসকল ইস্যু ইলেকশন কমিশনের সামনে আছে বা আসবে সেগুলো যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি করেন। এরই মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পেলো।

তিনি আরও বলেন, প্রতীকের বিষয়টিও ইলেকশন কমিশনের সামনে রেফার করা হলো আদার ইস্যু (অন্যসকল বিষয়) হিসেবে। আমরা মামলার শর্ট অর্ডার চেয়েছি। আশা করছি আগামীকালের মধ্যেই মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ আমরা হাতে পাব। এই সংক্ষিপ্ত আদেশ আমরা ইলেকশন কমিশনের কাছে অ্যাপ্রোচ (উপস্থাপন) করব। ইলেকশন কমিশন অতিদ্রুত জামায়াতের নিবন্ধন ও জামায়াতের প্রতীক ফিরিয়ে দিবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করি।

অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতীকের বিষয় এই মামলার ইস্যু ছিল না। প্রতীকের বিষয়ে মাননীয় আদালত কোনো নির্দেশনা দেননি। ওটা ২০১৬ সালে অন্য একটা মাধ্যমে হয়েছিল। উনাদেরকে অন্যভাবে এটা সমাধান করতে হবে।

এর আগে, দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকে প্রধান নির্বাচন নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

অপর দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল বৈঠকে উপস্থিত ছিল। দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার ও প্রখ্যাত আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির।

এটি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে জামায়াতের ১২ বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় বৈঠক। এর আগে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দলটির একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দাবি নিয়ে ইসি যায়।

সারাবাংলা/এনএল/এনজে

ইতিবাচক জামায়াতের নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর