পাবনা: পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের অসুস্থ হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে কণা খাতুন (২৭) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান ওই শ্রমিক। সোমবার (২ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম।
নিহত কণা খাতুন ওই গ্রামের খমিন ইসলামের স্ত্রী।
কণার স্বামী খমিন ইসলাম জানান, ‘আমিও ইপিজেডে চাকরি করি। শনিবার (৩১ মে) ইপিজেডের অন্যান্য শ্রমিকদের মতো আমার স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে যায়। রোববারও অসুস্থ শরীর নিয়েই ইপিজেডে ডিউটিতে গিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন কণা। পরে ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে তাকে চিকিৎসার দেওয়ার হয়। এরপর সেখানে কিছুটা সুস্থ বোধ করলে সন্ধ্যায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। পরে আবারও রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমরা। কিন্তু হাসপাতালে আর নিতে পারিনি তার আগেই বাড়িতেই মারা যান কণা।’
এদিকে ইপিজেডে পানের জন্য যে সাপ্লাই পানি রয়েছে সেখান থেকে পয়জনিং হয়েছে বলে ধারণা করছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আলী এহসান।
তিনি বলেন, রোববার ইপিজেডে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে পানির সোর্স ও ট্যাংকগুলো পরীক্ষা করেছি। এগুলো থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আইভি স্যালাইনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইপিজেডে যে স্যালাইন রয়েছে, তা খাবার স্যালাইন। বিপুল সংখ্যক রোগী সামাল দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, এখানকার মেডিকেল সেন্টারে আজ ৬৫ জন চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিপুল খাবার স্যালাইন মজুত আছে। যাদের প্রয়োজন, তারা এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। পানি পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মে যথারীতি প্রতিদিনের মতোই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরে যান ইপিজেডের শ্রমিকরা। পরে সেদিন রাত থেকেই অসুস্থ হতে থাকেন ঈশ্বরদী ইপিজেডের রেনেসা, অ্যাবা, নাকানো, স্টিল হেয়ার, আইএসমএসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। জ্বর, মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২৫০ শয্যা পাবনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন শ্রমিকরা। পরপর টানা দুই দিন শুক্রবার ও শনিবার অনেক শ্রমিক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। এরমধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। এখন পর্যন্ত ঈশ্বরদী ইপিজেডের অসুস্থ শ্রমিকের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে বেশকিছু শ্রমিকের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক আবার অনেক শ্রমিকই সুস্থ হয়েছেন।