সিলেট: সিলেটে ভারতের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে কুশিয়ারা নদীর তিনটি প্রতিরক্ষা বাঁধ (ডাইক) ভেঙে গেছে। জকিগঞ্জ উপজেলার তিনটি গ্রামের শত শত মানুষের চেষ্টায়ও রক্ষা হয়নি বাঁধ। প্রবল স্রোতে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে শত শত পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক পরিবার ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের প্রায় ১শ ফুট ও বাখরশাল গ্রামে ৫০ ফুট, খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকার ৪০ ফুট বাঁধ (ডাইক) ভাঙার খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার (২ জুন) মধ্যে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তিনটি স্থানে ডাইক ভাঙার খবর পাওয়া যায়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থানে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে জকিগঞ্জ পৌরসভা প্রাণকেন্দ্র জকিগঞ্জ বাজার, সদর ইউনিয়নসহ, উপজেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টিতে ভারতের আসাম ও চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা বরাক নদীর ঢলে আশঙ্কাজনকভাবে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী তীরবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জের তিনটি ডাইকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই তিন ডাইক দিয়ে হু হু করে পানি ঢুকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ডুবতে শুরু করেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুশিয়ারার ডাইকে আরও ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লোকজনের বসতঘরে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সোমবার ভোর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া শুরু করেছেন। উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
জকিগঞ্জ বারঠাকুরি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক দিয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। সোমবার ভোরে একই ইউনিয়নের বাখরশাল ও সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে।
এছাড়াও জকিগঞ্জ পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের পাশে ডাইকের ওপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারার পানি। মাইজকান্দি গ্রামের কাছে ডাইকের একাংশ ধসে পড়েছে।
জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, বীরশ্রী ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি, লক্ষ্মীবাজার, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দি ও আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে ডাইক উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে অনেকের বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রশাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ইউএনও।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশল দীপক রঞ্জন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, সুরমা-কুশিয়ারা বেশ কয়েকটি স্থনে গতকাল ফাঁটল দেখা দেয়। আজ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। আমাদের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। যেখানে ফাঁটল দেখা দিয়েছে, সেগুলো যাতে না ভাঙে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।