ঢাকা: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সেবার ওপর কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন বাজেটে ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্লাটফর্ম সেবায় ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর অনলাইনে পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবে সন্তুষ্ট নন আইসিটি খাতের সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন।
বাজেটে ইন্টারনেট সেবা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ এর পরিবর্তে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের ওপর আরোপিত টার্নওভার কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকে অর্ধেক কর দিতে হবে। এতে তাদের আর্থিক চাপ হ্রাস পাবে, যা সরাসরি গ্রাহকের খরচ হ্রাসে প্রভাব ফেলবে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ইন্টারনেট আরও সাশ্রয়ী হলে এর ব্যবহার সর্বসাধারণের জন্য আরও সহজ ও ব্যাপক হবে।’
মোবাইল ফোন অপারেটরদের ক্ষেত্রে কর কমানোর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই কর হ্রাসের ফলে অপারেটররা প্রযুক্তি উন্নয়ন ও নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে। ফলে মোবাইল গ্রাহকরা উন্নত সেবা, কম কলরেট ও সাশ্রয়ী ডেটা প্যাকেজের সুবিধা পাবেন।’
তবে বাজেটে ছোট ও মাঝারি আইএসপিদের জন্য কোনো সুখবর নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সভাপতি আমিনুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘বাজেট গতানুগতিক। দেশের ইন্টারনেট খাতের জন্য বিশেষ কিছু নেই। ছোট ও মাঝারি আইএসপি ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো সুখবর নেই। আগে যা ছিল এখনও তাই আছে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী যারা আছেন তারা শতভাগ দেশীয় উদ্যোক্তা। তবে করপোরেট ব্যবহারকারীদের যারা ইন্টারনেট সেবা দেয় তারা কিছুটা সুবিচার পেতে পারে। কারণ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) কেটে রেখে বিল পরিশোধ করে। এআইটি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করায় স্বল্প সংখ্যক আইএসপি কিছুটা সুবিচার পেতে পারে।’
আইএসপিএবি সভাপতি আরও বলেন, ‘সরকার ইন্টারনেটের দাম কমাতে চায়। কিন্তু ভ্যাট, ট্যাক্সে হাত দেবে না, ইকুইপমেন্টের মধ্যে হাত দেবে না। ফলে কোনো লাভ হবে না। ভ্যাট, ট্যাক্সে হাত না দিলে ইন্টারনেটের দাম কমবে না।’
ওটিটি’র ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব বিষয়ে আইএসপিএবি’র সিনিয়র সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক বলেন, ‘মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দেশীয় ওটিটি গড়ে উঠেছে। অনলাইন স্ট্রিমিং ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে এখন তারা বিদেশি ওটিটি’র কাছে মার খাবে। দেশে জনপ্রিয় হলেও বিদেশি ওটিটি থেকে কিন্তু সরকার সেভাবে কোনো আয়ও পায় না। এ ক্ষেত্রে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হলে এটা বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেরই প্রমোট করা হবে। যারা চরকি দেখছে তাদের ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে। আবার যারা সনিলিভ দেখছেন তাদের সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ পড়ছে না। আমি মনে করি, এই শুল্ক ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবসার ওপর নতুন বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাই দেশীয় ওটিটি ইন্ডাস্ট্রির বিকাশের জন্য শুরুতে দেশীয় ওটিটি প্লাটফর্মগুলোকে শুল্ক মুক্ত হওয়া উচিত।’
মোবাইল হ্যান্ডসেটে ভ্যাট কমানোর প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে না মন্তব্য করে শাওমি বাংলাদেশরে কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি বাজেটে মোবাইল হ্যান্ড সেটের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমানোর কোনো প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে না। উৎপাদন পর্যায়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারকদের লাভের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে, তবে সেটাও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। বেশিরভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক প্রায় ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে, এবং ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে এত বেশি ব্যয় হয় না। তাই আমার ধারণা, ব্যবসায়িক পর্যায়েও এর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।’
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইন্টারনেটের ওপর যে কর কমানো হয়েছে এটা ভালো। তবে বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে দাম না কমা পর্যন্ত আমরা একে স্বাগত জানাতে পারছি না। পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থাৎ অনলাইনভিত্তিক সকল সেবার ক্ষেত্রেই কর বৃদ্ধি করা হয়েছে যার ফলে গ্রাহক পর্যায়ে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারের রাজস্ব খাতেও ঘাটতি আসবে। ডিভাইসের মূল্য যদি না কমে তাহলে ইন্টারনেট বিনামূল্যে দিয়েও লাভ নেই।’