Wednesday 04 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুকি-চিনের পোশাকের ‘সূতা গেছে’ আ.লীগ নেতার কারখানা থেকে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২৫ ২২:৫৯ | আপডেট: ৩ জুন ২০২৫ ১০:০৩

নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিনের সদস্যদের পোশাক। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে এক আওয়ামী লীগ নেতার কারখানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, যিনি সর্বশেষ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই কারখানা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) পোশাক তৈরির জন্য সূতা সরবরাহের অভিযোগ পেয়ে এ অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশ ওই কারখানা থেকে চারজনকে আটক করেছে।

সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় নগরীর চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় ওয়েল ফেব্রিক্স লিমিটেড নামে কারখানাটিতে অভিযান চালায় পুলিশ।

চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বায়েজিদ বোস্তামি থানায় কুকি-চিনের পোশাক উদ্ধার সংক্রান্ত একটি মামলা আছে। সেই মামলার সূত্রে ওয়েল ফেব্রিক্সে অভিযান চালানো হয়েছে। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে বায়েজিদ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কুকি-চিনের পোশাক তৈরির জন্য ফেব্রিক্সগুলো ওই কারখানা থেকে সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।’

বিজ্ঞাপন

ওয়েল ফেব্রিক্স লিমিটেডের মালিক প্রতিষ্ঠান ওয়েল গ্রুপ। এটি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. আবদুচ ছালামের পারিবারিক মালিকানায় থাকা শিল্পগোষ্ঠী। ছালাম ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।

এর আগে, গত ১৭ মে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানা থেকে ২০ হাজার ৩০০টি কেএনএফ’র ইউনিফর্ম জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। এরা হলেন- সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। এদের মধ্যে সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অপর দু’জন ইউনিফর্মগুলো তৈরির অর্ডার এনেছিলেন।

এ ঘটনায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেনের নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো তৈরির অর্ডার নেওয়া হয়েছিল। গত মার্চে এ অর্ডার কারখানায় এনেছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তারা মংহলাসিন মারমা ওরফে মং নামে একজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো তৈরির অর্ডার নেন। চলতি মে মাসে সেগুলো তাদের সরবরাহের কথা ছিল।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কুকি-চিন (কেএনএফ) পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার একটি নিষিদ্ধ সশস্ত্র জঙ্গি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। এর সদস্যরা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার বিভিন্ন থানার এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করে। বিভিন্ন মানুষজনের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, হত্যা, অপহরণ, গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে।

গ্রেফতার ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরস্পর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও যোগসাজসে বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করার প্রচেষ্টায় ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে রাষ্ট্রের সম্পত্তি বিনষ্ট, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত থাকিতে বাধ্য করে, সন্ত্রাসী কার্য সংগঠিত করে অবৈধভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।

এরপর ২৬ মে রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার নয়াহাট এলাকায় একটি গুদাম থেকে ১১ হাজার ৭৮৫ পিস ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এছাড়া ২৮ মে রাতে নগরীর পাহাড়তলী থানার একটি পোশাক কারখানা থেকে আরও প্রায় ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ওই কারখানার মালিককে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আওয়ামী লীগ নেতা কারখানা কুকি চিন পোশাক সূতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর