ঢাকা: জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইও) ভেতরে ও বাহিরের চারিদিকে সুনসান নীরবতা। প্রায় ছয় দিন ধরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নেই চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীদের ছোটাছুটি। এতে বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা রোগী এবং চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে আসা রোগীরা। এ ছাড়া প্রতিদিনই ফিরে যেতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগীকে।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান ফটকে বসে আছেন গুটি কয়েক পুলিশ ও আনসার সদস্য। গেটের ভেতর নেই অন্য কোনো লোকজনের বিচরণ ও কোলাহল। একেবারেই যেন সুনসান নীরবতা পালন করছে হাসপাতালের চারপাশের পরিবেশ। হাতপাতালের ভেতরে তথ্যকেন্দ্রে নেই কোনো কর্মকর্তা ও রোগীর সমাগম। এমনকি, হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ যেন একেবারেই নিরব ও ভূতুরে অবস্থা। হাসপাতালটিতে শুধু আছে গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে যারা ভর্তি হয়েছিলেন তারা। আর অন্য সাধারণ রোগীদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে ছেড়েছেন হাসপাতাল। অনেকেই আবার অনেক দূর থেকে এসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তারা শুধু বেডে থাকছেন। কিন্তু বাইরে অন্য হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের। কবে আবার এই চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসা মিলবে সেটি তাদের কাছে অজানা।
এদিকে অনেক রোগীই জানেন না হাসপাতাটিতে কয়েকদিন ধরে চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ রয়েছে, তাই সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন তারা। এমনই একজন রোগী জহির মাহমুদ স্বপন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার চোখে দিয়ে পানি পড়ে। এ জন্য চোখের নালী অপারেশন করতে হবে। আমি টাঙ্গাইল থেকে এসেছি। হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে আমি জানি না। এখন অন্য হাসপাতালে যেতে হবে আমাকে।’
চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালটিতে ভর্তি এক শিশুরোগীর মা রাবেয়া খাতুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাতপাতালটি খুব ভালো তাই এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম। আমার ছেলে এখানে ভর্তি আছে। কিন্তু হঠাৎ করে মারামারির ঘটনায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাইরে গিয়ে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।’
হাসপাতালের গেটে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মারামারির ঘটনার পর থেকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ আছে। হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা আসছেন না। কবে নাগাদ হাসপাতালটি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে সেটি আমরা জানিনা।’
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসা নিয়ে বর্তমানের পরিস্থিতির বিষয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালটি বন্ধ আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এটা চালু করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে হাসপাতালটি চালু হতে ঠিক কতদিন সময় লাগতে পারে সেটি আমার জানা নাই।’
চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হওয়ার ঘটনার সূত্রপাত:
গত ২৩ মে তিনজনকে জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও’র অনুরোধে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। পরে ২৫ মে ওই তিনজনসহ চারজন হাসপাতালের পরিচালকের রুমে ঢুকে গ্রিন টনিক পান করার ঘটনা ঘটে। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় তারা সুস্থ হন। ২৭ মে ওই তিনজনসহ জুলাই যোদ্ধারা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মে কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি করে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ কারণে হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগী ও সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে স্টাফদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে স্টাফ ও সেবা প্রার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।
মারামারির ঘটনার উত্তেজনা পুরো হাসপাতাল ছড়িয়ে পড়লে সব ওয়ার্ডের গেটে নিরাপত্তারক্ষীরা তালা দিয়ে দিলে আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কায় উল্টো তালা ভেঙে জুলাই যোদ্ধারা লাঠিসোঁটা, রড হাতে ডাক্তার, স্টাফ ও সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠে। এসময় বেশকয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেই থেকে হাসপাতালটিতে এখনও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।