ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। একইসঙ্গে তিনি এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্জিত লভ্যাংশের উপর কর মওকুফ এবং এক লাখ টাকার উর্ধ্বে অর্জিত লভ্যাংশের উপর ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করে সেটাকে চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই অভুত্থান পেরিয়ে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জাতির ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সফলতার সাথে গত ২ জুন ২০২৫ তারিখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অর্থ বিল অনুমোদন করেছে যা প্রশংসনীয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা মহোদয়ের বাজেট বক্তৃতায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচটি দিকনির্দেশনার বিষয়ও গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশনার মধ্যে পুজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তি এবং নেতৃত্বস্থানীয় দেশীয় ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয়েরও উল্লেখ ছিল। এছাড়া উক্ত নির্দেশনায় পুঁজিবাজারের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ ছিল। এছাড়াও নির্দেশনায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনিয়মের ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ ছিল। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, পুঁজিবাজারকে আগামীর অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ভূমিকা পালনে সরকারের নীতি সহায়তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, সরকার পুঁজিবাজারের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যকার করপোরেট করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে ৭.৫ শতাংশে বৃদ্ধি করেছে। যার ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি করপোরেট করহারে ছাড় পাবেন। এটি দেশি বিদেশি লাভজনক ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহী করবে। প্রস্তাবিত বাজেটে আরেকটি ইতিবাচক খবর রয়েছে। পুঁজিবাজারে কর্মরত ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর ধার্য কর ০.০৫ শতাংশ হতে ০.০৩ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট এবং লেনদেনের স্বল্প ভলিউম পরিলক্ষিত হচ্ছে; এই কর ছাড়ের ফলে আগামীতে পুঁজিবাজারের লেনদেনের বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়াও পুঁজিবাজারে কর্মরত মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ১০ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। পূর্বে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ৩৭.৫ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। এখন যা ২৭.৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার উন্নয়নে কাজ করতে উৎসাহ পাবে। পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন মার্চেন্ট ব্যাংক। পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোয় মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই সরকারের উদ্যোগের ফলে গত বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি থেকে অর্জিত মূলধনী মুনাফার (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) উপর করের হার কমানো হয়েছিল। এসময় অর্জিত মূলধনী মুনাফার উপর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে অর্ধেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। উপরোক্ত পদক্ষেপসমূহ থেকে স্পষ্ট হয় যে, সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়নের বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক ও আন্তরিক।
বিনিয়োগকারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের কল্যাণ ও সুরক্ষার্থে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকসংস্থা বিএসইসি ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকউন্টের উপর ধার্যকৃত বার্ষিক মেইনটেন্যান্স ফি ৪৫০ টাকা থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস করে ১৫০ টাকা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং সমন্বিত গ্রাহক হিসাব হতে অর্জিত সুদের ২৫ শতাংশ ইনেভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে জমারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সরাসরি উপকৃত হবেন।