ঢাকা: ক্ষমতায় গেলে ১৮০ দিনের কর্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তমুখী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিএনপি।
বুধবার (৪ জুন) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ পরিকল্পনার কথা জানান।
২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিএনপি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, মানুষের আস্থা অর্জন এবং ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ় ভিত্তি গড়তে প্রয়োজন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। গতানুগতিকতা ছেড়ে সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। তাহলেই জাতির জন্য আশা, আস্থা ও পুনর্গঠনের দিগন্ত উন্মোচন হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনে কী কী কাজ করবে, তার পরিকল্পনা প্রকাশ করে থাকে। জনগণের ক্ষমতায়নের দল হিসেবে বিএনপি বাংলাদেশে এমন একটি বাস্তবসম্মত সংস্কৃতি প্রবর্তন করতে চায়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর প্রথম ১৮০ দিনের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নির্বাচনের আগেই নির্ধারণ করা হবে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘এই ৬ মাসের পরিকল্পনার ভিত্তিতে একটি অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন সেক্টরে বিএনপি কী-কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, আমরা সেগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরব।’
বিএনপির পরিকল্পনার সার-সংক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন—
- প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা এবং তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
- দেশের ও প্রবাসী শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। মূল লক্ষ্য হবে – প্রাথমিক পর্যায় থেকে বহু ভাষা, ক্রীড়া, কৃষ্টি এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নয়নসহ বাস্তবানুগ বিষয়সমূহ শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা।
- সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্লাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক্স, ডেন্টাল হাইজেনিস্ট, মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান ইত্যাদির স্বল্পমেয়াদি ‘ট্রেড কোর্স’ চালু করা হবে।
- শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবমুখী করতে এপ্রেন্টিসশিপ, ইন্টার্নশিপ এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় শহরগুলোতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপন করে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। ফলে শিক্ষার্থীগণ হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করবে এবং কর্মজীবনে ব্যপক হারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
- জেলা পর্যায়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেটিভ বিজনেস আইডিয়া বাণিজ্যিকিকরণ করতে প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় সিড ফান্ডিং বা ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রদান করা হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো – ক্যাম্পাস থেকে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা তৈরি করা। তারা নতুন এবং সৃজনশীল ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়ন করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন।
স্বাস্থ্য সেবা নিয়েও দলের পরিকল্পনার কথা জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি জানান—
- রোগ প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে টিকাদান, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সচেতনতা তৈরির একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্যানিটেশন এবং পুষ্টির উপর জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
- চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্পেশালাইজড ট্রেনিং স্কিম শুরু করা হবে। তারা রোগের দ্রুত সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধে দক্ষ হয়ে উঠবেন।
- নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য আধুনিক পরিশোধন ব্যবস্থা ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী রিসার্ভার তৈরি করা হবে। জনগণ নিরাপদ পানি পাবে।