ঢাকা: ক্ষমতায় গেলে ১৮০ দিনের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ খাতে ট্রান্সমিশন আধুনিকীকরণে বরাদ্দ বাড়াবে বিএনপি।
বুধবার (০৪ জুন) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ পরিকল্পনার কথা জানান।
আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিএনপি।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক গ্যাস, সৌর, জলবিদ্যুৎ ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে বাংলাদেশের আদর্শ মিশ্রণ নির্ধারণ ও সিস্টেম ভিত্তিক পরিকল্পনা করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করবে। এই পরিকল্পনা কাঠামো হবে তথ্য-ভিত্তিক, আয়-ব্যয়-মডেলিং সমৃদ্ধ এবং জলবায়ু লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। চুক্তি এবং ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণ জনসাধারণের কাছে প্রকাশে সচেষ্ট থাকবে। এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং সর্বসাধারণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে ট্রান্সমিশন আধুনিকীকরণ ও ডিজিটাইজেশনে অধিক বরাদ্দ দেওয়া হবে। গ্রিড স্থিতিস্থাপকতা, স্মার্ট মিটারিং এবং আঞ্চলিক আন্তঃসংযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করে গ্যাস, খনিজ অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেওয়া হবে। নবায়নযোগ্য ও সাশ্রয় প্রযুক্তিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য কর প্রণোদনা দেওয়া হবে।’’
নীল অর্থনীতি নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘বঙ্গোপসাগরের বিশাল সামুদ্রিক সম্পদকে টেকসইভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে টেকসই সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রভিত্তিক শিল্প ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণ, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন গবেষণা এবং উদ্ভাবন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে।’’
নীল অর্থনীতির প্রধান খাতসমূহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মৎস্য ও সামুদ্রিক খাদ্য, নৌপরিবহন ও বন্দর, অফশোর গ্যাস ও খনিজ সম্পদ, নবায়নযোগ্য শক্তি (সমুদ্র-বায়ু ও জোয়ার শক্তি), সমুদ্র পর্যটন ও বিনোদন এবং সমুদ্র গবেষণা ও প্রযুক্তি। কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত “ম্যারিটাইম জোন” ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি উদ্যোগ নেওয়া হবে। সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক লাভ নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত জরিপ, মানচিত্রায়ন এবং সম্পদের প্রকৃত মজুদ নির্ধারণ করা হবে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পদ্ধতিতে সম্পদ আহরণ ও অর্থনৈতিক ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।’’
সৃজনশীল শিল্প অর্থনীতি নিয়ে বিএনপি’র পরিকল্পনা সম্পর্কে আমির খসরু বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। ডিজিটাল অবকাঠামোও বাড়ছে। কিন্তু সৃজনশীল অর্থনীতি জিডিপিতে ০.৫ শতাংশেরও কম অবদান। উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে এই খাত ৩-৫ শতাংশ অবদান রাখে। এই খাতের মধ্যে রয়েছে: চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নির্মাণ, সঙ্গীত ও মঞ্চ শিল্পকলা, অ্যানিমেশন, ভিএফএক্স ও গেমিং, মেকআপ, পোশাক এবং নকশা, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বিষয়বস্তু তৈরি, সিজিআই এবং ক্রিয়েটিভ মিডিয়া সেবাদাতা সফটওয়্যার কোম্পানি, ইউটিউব, টিকটক এবং ইনফ্লুয়েন্সার অর্থনীতি ইত্যাদি।’’
বাণিজ্য সহজীকরণ ও শুল্ক পদ্ধতি উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি বলন, ‘‘শুল্ক পদ্ধতি সহজ হলে এবং বাণিজ্য বাধা কমলে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াবে। শুল্ক শ্রেণিবিন্যাস ডিজিটাইজ করা হবে। আমদানি প্রক্রিয়া, বিশেষ করে মূল কাঁচামালের জন্য ক্লিয়ারেন্স দ্রুততর করবে। ব্যবসায়ীদের খরচ কমাবে।’’
ডিজিটাল আর্থিক সেবার ব্যবহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা সম্পর্কে আমির খসরু বলেন, ‘‘ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রসার অর্থায়নের সুযোগ বাড়াবে। এটি বিশেষত সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ লেনদেনসীমাসহ মার্চেন্ট ওয়ালেটের জন্য মোবাইল আর্থিক সেবা সক্রিয় করতে প্রোটোকল স্থাপন করা হবে। এটি পাইকারি লেনদেন সহজ করবে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল পেমেন্টও সহজলভ্য করবে।’’