Tuesday 15 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেটে পাড়ায় পাড়ায় শানম্যানদের ঈদের কর্মব্যস্ততা

জুলফিকার তাজুল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৪ জুন ২০২৫ ২৩:৪৩ | আপডেট: ৫ জুন ২০২৫ ১২:০৯

হ্যান্ডমাইক দিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেন শানম্যানেরা। ছবি: সারাবাংলা

সিলেট: আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার কোরবানিকে সামনে রেখে সিলেটে অন্তহীন সময় পার করছেন শানম্যানরা। বৈচিত্রময় হাজার পেশার ভিড়ে আরেকটি শ্রমজীবী পেশা হচ্ছে শানম্যান। পুরোনো দা, বটি, শীলপাটা, ছুরিতে শান দেওয়াই তাদের কাজ। বিশেষ করে ঈদুল আজহার আগে বেশিরভাগ তাদের চোখে পড়ে।

এই ঈদ আসলেই শহরের অলি-গলিতে হ্যান্ডমাইক হাতে উচ্চ কণ্ঠে শুনতে পাওয়া যায়, ‘এই দাও ধার, বটি ধার, শীলপাটা ধার, লাগবো…’। এভাবেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শানম্যানরা।

সিলেটের লামাপাড়া এলাকায় শতাধিক শানম্যান বসবাস করলেও ঈদের আগে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বছরজুড়ে তারা অবহেলিত থাকলেও, কোরবানির ঈদের আগে গৃহিণীদের কাছে তাদের কদর দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কারণ এই ঈদে গরু জবাইয়ের জন্য দা, ছুরি, চাপাতিতে ধার থাকা জরুরি।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, তারা বটি শান দিতে নেয় ৫০ টাকা, দা ৭০ টাকা, ছুরি ২০ টাকা, চাপাতি ৬০ টাকা, শীলপাটা ১০০ টাকা। স্থানভেদে টাকার অঙ্কের পার্থক্য হতে পারে।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামের শাবু মিয়া (৫৫)। ২০ বছর ধরে তিনি এ পেশায় রয়েছেন। থাকেন সিলেটের লামাপাড়া এলাকায়। বাপ-দাদার আমল থেকে এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। কাজ করেন বরিশাল, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ও বিদেশের মধ্যে নেপাল। কারণ নেপালে শানের চাহিদা প্রচুর। আয় রোজগারও বেশি করা যায় বলে জানান তিনি।

তিনি সিলেটের উপশহর, কুমারপাড়া, ঝেরঝেরি পাড়া, হাউজিংস্টেট, জালালাবাদ, রায়নগর, শিবগঞ্জ, লন্ডনি রোড, মেজরটিলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসায় বাসায় গিয়ে দা-বটিতে শান দেন। শাবু মিয়া সারাবাংলাকে জানান, মাত্র ৪ হাজার টাকায় শান দেওয়ার মেশিনটি কিনেছিলেন তিনি। বর্তমানে শান দিয়ে তিনি মাসে আয় করেন প্রায় ১৫ হাজার টাকা। হবিগঞ্জে প্রায় ২০ হাজার শানম্যান পেশায় রয়েছেন বলে শাবু মিয়া জানান।

বহনযোগ্য মেশিন হাতে নিয়ে এলাকায় এলাকায় ঘুরেন শানম্যানেরা। ছবি: সারাবাংলা

হবিগঞ্জের একই এলাকার আরেক শানম্যান আজির উদ্দিন (৪৫)। তিনি আগে কৃষিকাজ করলেও গত চার বছর ধরে ঢাকায় দা, বটি, শীলপাটা ধার দিচ্ছেন। তিনি সারাবাংলাকে জানান, তার বন্ধুর কাছ থেকে মাত্র দুই দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি মেশিন চালানো শিখেছেন। পরে তিনি সাইকেলের অব্যবহৃত জিনিস দিয়ে নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন শান মেশিন। শান মেশিন তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেছেন সাইকেলের হ্যান্ডেল, চেইন, সিট এবং পাথার ও কাঠ। শান মেশিন তৈরিতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা।

শাবু মিয়া, বাসায় বাসায় গিয়ে শান করেন। নিজের উপস্থিতি জানান দেন হ্যান্ড মাইকিং করে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিন সময়ে আমাদের চাহিদা বেশি- রমজানের ঈদ, কোরবানির ঈদ ও গ্রামে ধান কাটার মৌসুমে। কোরবানির ঈদের দুইদিন আগে শানম্যানদের কদর বেড়ে যায়। তখন অনেকে লাইন দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। এ সময় তার আয় দৈনিক তিন-চার হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।

সিলেটের কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিপলু আহমেদ (৪০)। পারিবারিক বড় অনুষ্ঠানের আগে তিনি ঘরের দা, বটি শানম্যানদের হাতে দিয়ে নেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে গ্রামে পুরাতন দা, বটি শান দিতে সাপ্তাহিক হাটে কামারের কাছে যেতে হতো। এখন এরা বাসায় বাসায় এসে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশে হাজার হাজার বেকারের ভিড়ে এটি কম পুজিঁতে দারুণ কর্মসংস্থান।’

সারাবাংলা/এইচআই

ঈদুল আজহা কোরবানি শানম্যান সিলেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর