পুরো বিশ্বব্যাপী চলছে ঈদুল আজহার শেষ সময়ের প্রস্তুতি। তবুও গাজায় অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলি হামলা। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার (৪ জুন) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) এক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবটিতে গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছিল।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি দেশই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র তাতে বিরোধিতা করে ভেটো দেয়। প্রস্তাবে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির কথাও উল্লেখ ছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে এই মুক্তির বিষয়টি সরাসরি সংযুক্ত না হওয়ায় প্রস্তাবটি ‘অগ্রহণযোগ্য’।
ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া পরিষদে বলেন, ‘এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র এবং এটা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে যে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে- যার মধ্যে হামাসকে পরাজিত করা এবং তারা যেন আর কখনো ইসরায়েলকে হুমকি দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করাও অন্তর্ভুক্ত।’
চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, ইসরায়েল ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতিটি সীমা অতিক্রম করেছে’ এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘একটি দেশের সুরক্ষা থাকার কারণেই এইসব লঙ্ঘন থামানো যাচ্ছে না বা জবাবদিহির আওতায় আনা যাচ্ছে না ইসরায়েলকে।’
আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, এই ভেটোর মাধ্যমে ‘যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি একঘরে হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘একটি বৈশ্বিক স্রোত তৈরি হচ্ছে, যা ইসরায়েল ও গাজায় তার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই এখনো ইসরায়েলকে রক্ষা করতে গিয়ে এই প্রবাহ আটকে রাখার চেষ্টা করছে। এটি আত্মরক্ষা নয় বরং গাজায় দখল ও অবরোধকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টাই করছে ইসরায়েল।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা ইস্যুতে ১৪টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, যার মধ্যে চারটি গৃহীত হয়েছে। বুধবারের প্রস্তাব ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরের পর প্রথম উত্থাপিত প্রথম প্রস্তাব।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশের রাস্তায় যাওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে দিয়েছে। এসব অঞ্চলকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বুধবার একদিনের জন্য পুরো ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
জিএইচএফের বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, তারা মানবিক নীতিমালা মানছে না। বিতরণের কাজে বেসরকারি মার্কিন নিরাপত্তা ও লজিস্টিক কর্মীদের ব্যবহার করে ত্রাণকে সামরিকীকরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটের আগে আবারও ত্রাণকর্মীদের প্রবেশাধিকার চেয়ে বলেছেন, ‘সকল সীমান্ত খুলে দিন। সবদিক থেকে ব্যাপকভাবে জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ ঢুকতে দিন। কী পরিমাণ ত্রাণ আসবে এবং কী আসবে এ সীমাবদ্ধতা তুলে দিন। আমাদের গাড়িবহর যেন অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে না থাকে।’
এদিকে ইসরায়েলের দাবি, হামাস ত্রাণ লুট করছে। যদিও এই অভিযোগ হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থাও বলেছে, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া এই বিতরণ কার্যক্রমে এরইমধ্যে শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।
বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যার যুদ্ধে কমপক্ষে ৫৪,৬০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন করে ৯৭টি মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং ৪৪০ জন আহত হয়েছেন। যার ফলে ইসরায়েলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা ১,২৫,৩৪১ জনে দাঁড়িয়েছে।