কিশোরগঞ্জ: প্রতিবারের মত এবারও বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৮তম ঈদুল আজহার জামাতে ইমামতী করবেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।
মাঠের সুনাম ও জনশ্রুতির কারণে বাংলাদেশের দূর-দূরান্তের জেলাসহ এমনকি বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিরা ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতি বছরই এ সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর আগে তিন বার শর্টগানের গুলি ছড়ে মুসল্লিদের নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
উপমহাদেশের সর্বপ্রাচীন ও বৃহৎ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ঈদুল আজহার জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সাজানো হয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, চার স্তরের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। মুসল্লিদের আসা-যাওয়ার জন্য থাকছে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে দুটি স্পেশাল ট্রেনও। এরইমধ্যে মাঠের মধ্যে কাতারের জন্য লাইন টানার কাজ শেষ হয়েছে। মাঠের আগাছা পরিষ্কার এবং মাঠের মধ্যে ছোট ছোট গর্তে মাটি ফেলে ভর্তি করে ঢেলে সাজানো হয়েছে এই ঐতিহাসিক ঈদগাহ মাঠটি।
মুসল্লিরা বলছেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে সবাই একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করলে সওয়াব বেশি হয়, মনে তৃপ্তি আসে ও আল্লাহ তা’আলার দরবারে দোয়া কবুল হয়। এ আশায় লাখ লাখ মুসুল্লী একসঙ্গে শোলাকিয়ায় এই ঈদ জামাতে শরীক হয়।
জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ইদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, ঈদ-উল আজহার দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে ২টি স্পেশাল ট্রেন ভৈরব- কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আসা যাওয়া করবে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।
নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সেনাবাহিনী,বিজিবি এবং পুলিশ ও শতাধিক র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে কড়া নজরদারীতে নিয়োজিত থাকবেন এদিন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ দায়িত্বে থাকবেন।
মো: কাজেম উদ্দীন, পুলিশ সুপার, ঢাকা রেঞ্জ জানান, ঈদ জামাতকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দিতে ও নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে পুরো মাঠ ও আশপাশ। নামাজের সময় বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
এছাড়াও, মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিক্টেটর। আর আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা, এর ফলে নিরাপদে, নির্বিঘ্নেও নিশ্চিন্তে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারবেন।
আশরাফুল কবির, কোম্পানি কমান্ডার, র্যাব-১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ জানান, মাঠে শতাধিক র্যাব সদস্য কয়েক স্তরে দায়িত্ব পালন করবে। পুরো মাঠ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। মাঠে নজরদারি রাখতে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে স্নাইপারসহ অন্যান্য সদস্যরা থাকবে। সেইসঙ্গে প্রতিবারের মতো ড্রোন ও বাইনোকোলার সার্ভালেন্স থাকবে।
মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারী প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সনে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’ । সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের ‘শোলাকিয়া’ মাঠে। মাঠে একসঙ্গে দুই লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। প্রায় সাত একর আয়তনের মাঠটিতে ২৬৫টি কাতার রয়েছে ।