Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদের লম্বা ছুটি, দলে-দলে চট্টগ্রাম ছাড়ছে মানুষ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ জুন ২০২৫ ১৭:৪৮ | আপডেট: ৫ জুন ২০২৫ ২০:৩৭

চট্টগ্রাম ছেড়ে স্বজন-পরিজনের কাছে যেতে শুরু করেছে মানুষ। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল আজহার টানা দশদিনের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। তবে কর্মদিবসের শেষদিন থেকেই চট্টগ্রাম ছেড়ে স্বজন-পরিজনের কাছে যেতে শুরু করেছে মানুষ। ট্রেনে-বাসে মানুষ ছুটছে বাড়ির দিকে। রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, নগরীর প্রবেশমুখগুলোতে মানুষের ভিড়।

চট্টগ্রাম থেকে এবার ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট নিয়েও কোনো বিড়ম্বনা ছিল না। দু’য়েকটি ট্রেন বাদে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিকেল পর্যন্ত গত দুইদিনে অধিকাংশ ট্রেনই শিডিউল অনুযায়ী চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে। বাসে বাড়তি ভাড়ার কিছু অভিযোগও পাওয়া গেছে। তবে তুলনামূলকভাবে এবারের ঈদযাত্রা মোটামুটি স্বস্ত্বির বলে জানালেন যাত্রীরা।

বিজ্ঞাপন

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা প্রায় পৌনে এক কোটি। এর বড় অংশ কর্মস্থলের কারণে চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করেন। চট্টগ্রাম বন্দর, সিইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেডসহ বিভিন্ন কল-কারখানায় কর্মরত লাখো শ্রমিক চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। বুধবার (৪ জুন) বিকেল থেকে এসব শ্রমিকদের বড় অংশ চট্টগ্রাম ছাড়তে শুরু করেছেন।

তবে সাধারণত কোরবানির ঈদে রোজার ঈদের মতো নগরী একেবারে ফাঁকা হয়ে পড়ে না। নগরীর স্থায়ী বাসিন্দাদের পাশাপাশি আশপাশের উপজেলার বাসিন্দা, যারা শহরে বসবাস করেন, তাদেরও অনেকে শহরেই কোরবানি দেন। কিন্তু এবার লম্বা ছুটির কারণে অনেকেই গ্রামে ফিরছেন বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর যাত্রীর সমাগম। তবে আগের মতো হুড়োহুড়ি কিংবা অস্বস্ত্বির পরিবেশ দেখা যায়নি।

ঢাকাগামী ট্রেনের যাত্রী কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো. তানভীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার ট্রেনের টিকিট পেতে কষ্ট হয়নি। রোজার ঈদেও সহজেই ট্রেনের টিকিট পেয়েছিলাম। বন্ধও লম্বা। বাড়ি চলে যাচ্ছি। সেখানে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো।’

সিইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা মাহবুব রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। ট্রেনে এবার কোনো ঝামেলা নেই। যাত্রাপথে কোনো সমস্যা না হলে আশা করি সুন্দরভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারবো।’

বুধবার জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পরে এবং চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট পরে চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ে। বিজয় এক্সপ্রেস সকাল সোয়া ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ে দুপুর সোয়া ১২টায়। আর মেঘনা এক্সপ্রেস বিকেল সোয়া ৫টার পরিবর্তে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ছাড়ে।

বৃহস্পতিবারও জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পরে ছেড়েছে। তবে এদিন সকালে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সিলেটগামী পাহাড়ি এক্সপ্রেসসহ বিকেল পর্যন্ত প্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিজয় এক্সপ্রেস আর মেঘনা এক্সপ্রেস ছাড়া গত দুদিনে সব ট্রেন শিডিউল অনুযায়ী ছেড়েছে। আশা করছি, আগামীকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত ঈদযাত্রার সব ট্রেন সুন্দরভাবেই সার্ভিস দেবে, কোনো সমস্যা হবে না।’

ঈদে ট্রেনে করে মানুষ ছুটছে বাড়ির দিকে। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ঢাকা, কক্সবাজার, সিলেট, জামালপুর ও চাঁদপুর রুটে আন্তঃনগর ও লোকাল মিলিয়ে মোট ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা–কক্সবাজার রুটের দুই ট্রেনেও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবার চাঁদপুর রুটে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে। বুধবার থেকে সেগুলো চলাচল শুরু করেছে, যা শুক্রবার পর্যন্ত চলবে।

এদিকে, চট্টগ্রামের স্থানীয় ও আন্তঃনগর বাস টার্মিনালগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় লেগে আছে। কদমতলী বাস টার্মিনাল, বিআরটিসি বাস স্টেশন, গরীবুল্লাহ শাহ মাজার গেইট, কর্নেলহাট, অলংকার মোড়, সিনেমা প্যালেসসহ বিভিন্নস্থানে সব বাস কাউন্টারে শত, শত ঘরমুখো মানুষের জটলা দেখা গেছে। নগরীর প্রবেশমুখ শাহ আমানত সেতুর দু’প্রান্ত, অক্সিজেন মোড়, একে খান, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল- এসব এলাকায় ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়। বাস এলেই হুড়মুড় করে ‍উঠে পড়ছে মানুষ।

কুমিল্লা, নোয়াখালী, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের আশপাশের জেলার বাসগুলোতে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। কদমতলী বাস টার্মিনালে নোয়াখালীগামী বাসের যাত্রী মো. শামসুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘৩৫০ টাকার টিকিট নিচ্ছে ৫৫০ টাকা। ২০০ টাকা বেশি। প্রতিবার ঈদের সময় এই ঝামেলা হয়।’

এদিকে, বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল হাসান, রাইয়ান ফেরদৌস ও সুব্রত হালদার নগরীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেটরা বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত না নেওয়ার জন্য সতর্ক করেন।

সারাবাংলা/আরডি/এসডব্লিউ

ঈদযাত্রা ট্রেন যাত্রা