Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বড় গরুর চাহিদায় ভাটা, ‘ঘরে পালা’ ছোট-মাঝারি বিক্রি তুঙ্গে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ জুন ২০২৫ ২০:০৯ | আপডেট: ৫ জুন ২০২৫ ২২:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বরাবরের মতো ঈদুল আজহার একেবারে আগমুহুর্তে এসে চট্টগ্রামের কোরবানির বাজার ক্রেতার ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে। দলে-দলে ক্রেতারা ভিড় করছেন নগরীর বিভিন্ন বাজার, অ্যাগ্রোতে। গ্রামগঞ্জের বাজারেও ছুটছেন অনেকেই। তবে শেষমুহুর্তে এসে বাজারে বড় গরুর চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা বেড়েছে ছোট ও মাঝারি গরুর। একইসঙ্গে গৃহস্থবাড়ি কিংবা কৃষকের ঘরে পালিত গরু ও মহিষের চাহিদাও বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিকেলে নগরীর সাগরিকা ও মইজ্জ্যারটেক বাজারে দেখা গেছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ট্রাকে-ট্রাকে আসছে ছোট ও মাঝারি গরু। আর যেসব বেপারি বাজারে শুধু বড় গরু নিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে ক্রেতার আনাগোণা কম দেখা গেছে। এক লাখ, দেড় লাখ কিংবা দুই লাখের মধ্যে যেসব গরু বাজারে আছে, সেগুলোর আশপাশে ক্রেতার ভিড় তুলনামূলক বেশি।

বিজ্ঞাপন

মইজ্জ্যারটেক বাজারের ইজারাদার জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে বড়, ছোট, মাঝারি মিলিয়ে গত দুইদিনে প্রায় দেড় হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ছোট গরুর চাহিদা বেশি। লোকজন এসে শুধু ছোট গরু দরদাম করছেন। সেজন্য আবার বাজারে ছোট গরু আসা শুরু হয়েছে। বুধবার রাতেও ৫০ গাড়ি গরু এসেছে, সব ছোট গরু।’

নগরীর হালিশহর আবাসিক এলাকা থেকে সাগরিকা বাজারে গরু কিনতে যাওয়া মো. নুর উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেপারিরা বড় গরুর দাম ধরে বসে আছেন। দাম একেবারেই ছাড়তে চাচ্ছেন না। এজন্য মানুষ ছোট আর মাঝারি গরুর দিকে ঝুঁকছেন।’

নগরীর হেমসেন লেইন থেকে সাগরিকা বাজারে যাওয়া শরীফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বড় গরুর দাম অনেক বেশি বলছে। আমি একটা গরু পছন্দ করেছিলাম। বেপারি দাম চাচ্ছে আট লাখ টাকা। আমি প্রথমে সাড়ে ৪ লাখ, এরপর ৫ লাখ, সাড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বলেছি। কিন্তু আট লাখের কম দেবে না বলছে। এত টাকা দিয়ে বড় গরু কেনার দরকার কী !’

মইজ্জ্যারটেক বাজারে কথা হয় আমিনুল ইসলাম নামে একজনের সঙ্গে। তিনি সরাসরি ক্রেতা নন, কিন্তু বাজারে আসা ক্রেতাদের দরদামে সহযোগিতা করে গরু কিনে দিচ্ছেন। আমিনুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেপারিরা বড় গরুর এমন দাম চাচ্ছে, কেনার উপায় নেই। ৫ লাখ টাকার গরুর দাম দিচ্ছে ৯ লাখ টাকা। ৭ লাখ টাকার গরুর দাম দিচ্ছে ১২ লাখ টাকা। বড় গরু উনাদের হিসেবে কিনলে ৬০ হাজার টাকা প্রতিমণ গোশতের দাম পড়বে। আমি একটা গরু তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা বলেছি। উনারা বলছে ৬ লাখ টাকা। ছয় মণ-সাত মণ ওজনের গরুর দাম দিচ্ছে ৪ লাখ টাকা। আট মণ- নয় মণের গরুর দাম দিচ্ছে ১২ লাখ টাকা।’

নগরীর মিয়াখান নগর এলাকা থেকে সাগরিকা বাজারে যাওয়া মুরাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে এবার বড় গরু বেশি। অ্যাগ্রোতে গিয়েছিলাম, সেখানেও ম্যাক্সিমাম বড় গরু। দাম ছয় লাখের ওপরে। আমার বাজেট ৩ লাখ টাকার মতো। ভেবেছিলাম, এই টাকায় বড় গরু পাব। এখন একটা মাঝারি মানের গরু চয়েস করেছি। দাম বলছে আড়াই লাখ টাকা। দরদাম করে সেটাই নেব ভাবছি।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট গরু ৬০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে। দেড় থেকে তিন লাখের মধ্যে মাঝারি মানের গরু মিলছে। দাম নাগালে থাকায় ছোট-মাঝারি গরুর দিকে ঝোঁক বেশি, বলছেন ক্রেতারা।

সাগরিকা বাজারের বেপারি মো. শওকত সারাবাংলাকে বলেন, ‘৩০টা বড় গরু এনেছিলাম যশোর থেকে। ১৫টার মতো বিক্রি করেছি। বড় গরুর দাম একটু বেশি, এটা ঠিক। খাদ্যদ্রব্যের দাম বেশি, একেকটা গরু পালতে অনেক খরচ। আগের চেয়ে লালন-পালনের খরচ বেড়েছে। আমরা কম দিয়ে বিক্রি করবো কীভাবে !’

মইজ্জ্যারটেক বাজারের বেপারি মো. সালাম বলেন, ‘সাতকানিয়া থেকে ১০টা ছোট গরু এনেছিলাম। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তিনটি বিক্রি করেছি। সারারাত কাস্টমার থাকবে। কালকের মধ্যে আশা করি সবগুলো বিক্রি করে ফেলতে পারবো।’

তবে এবার ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা গেছে গৃহস্থবাড়ি ও প্রান্তিক কৃষকের ঘরে পালিত গরুর প্রতিও। এজন্য ক্রেতাদের অনেকেই গত দুদিনে পটিয়ার কমল মুন্সীর হাট, শান্তিরহাট, রাউজানের চারা বটতল, বোয়ালখালীর শাকপুরা, ফটিকছড়ি-হাটহাজারীর বিভিন্ন হাটে গিয়েছেন।

নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ের বাসিন্দা ওমর খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ফটিকছড়ি থেকে কৃষকের ঘরে পালা গরু কিনেছি। এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দাম পড়েছে। প্রতিবার সাগরিকা কিংবা বিবিরহাট থেকে গরু কিনি। এবার ভাবলাম, ঘরে পালা গরুই কিনবো। দামেও মোটামুটি সস্তা পেয়েছি।’

মইজ্জ্যারটেক বাজারে গোলাপী মহিষের দিকেও ক্রেতার ঝোঁক দেখা গেছে। পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বড় গরুর দাম চাচ্ছে ৬ লাখ টাকা, ৮ লাখ টাকা। ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকায় একটা গোলাপী মহিষ কিনলাম। দেখতে খুব সুন্দর। ওজন ৮-৯ মণের কম হবে না।’

চট্টগ্রামে এবার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ২২৮টি কোরবানির হাট বসেছে। এর মধ্যে ৭৫টি স্থায়ী এবং ১৫৩টি অস্থায়ী হাট। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় নগরীতে ১০টি স্থায়ী ও ৩টি অস্থায়ীসহ মোট ১৩টি হাট বসছে। স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। এছাড়া ২১৫টি হাট বসছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সম্ভাব্য হিসেব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এবার ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি পশু কোরবানি হবে। চট্টগ্রামে খামারে এবং গৃহপালিত মিলিয়ে এবার মোট মজুত পশুর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। এছাড়া ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৯টি ষাঁড়, ১ লাখ ২১ হাজার ৬৭০টি বলদ, ৪৯ হাজার ১১৪টি গাভী এবং মহিষ ৬৪ হাজার ১৬৩টি। গয়াল ৩৫টি। ছাগল মজুত ২ লাখ ৫ হাজার ১৭৪টি ও ভেড়া আছে ৫৫ হাজার ৬৯৭টি।

সারাবাংলা/আরডি/এসআর

ঈদুল আজহা কোরবানি ছোট-মাঝারি গরু পশুর হাট বড় গরু বিক্রি তুঙ্গে