ঢাকা: জাল রেকর্ডপত্র তৈরি করে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর, অনুমতি ও নামজারি করে গুলশান-২ আবাসিক এলাকার ১০৪ নম্বর সড়কের ২৭/বি নম্বরে ২৭ কাঠা সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনায় অবশেষে আসামি হয়েছেন খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী। একইসঙ্গে আসামির তালিকায় যোগ হয়েছেন ওই সম্পত্তি দখল করা অপর অংশীদার ইফফাত হক ও তার স্বামী মোহাম্মদ আব্দুল মঈন। এ দম্পতি ২৭ কাঠার মধ্যে ১২ কাঠা দখল করেছিলেন। বাকি ১৫ কাঠা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছিল সালাম মুর্শেদী।
গত বছর (২০২৪ সাল) ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দুদকের উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল হক ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন পরিচালক জানান, সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে সরকারি বাড়ি দখল ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, ফ্ল্যাট ক্রয়সহ স্ত্রী ও নিজ সন্তানদের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের অর্জনের তথ্য দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের হাতে এসেছে। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার দুর্নীতির মামলা তদন্তকালে এসব বিষয় আমলে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৯ শে মার্চ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ওই সম্পত্তির অবস্থান বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন (অ্যাফিডেভিট ইন কমপ্ল্যায়েন্স) দিতে বলা হয়েছে। তবে সে সময় সরকার দলীয় এমপি থাকায় অদৃশ্যভাবে প্রভাবশালী ছিলেন সালাম মুর্শেদী। ঢাকার গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত যে বাড়িটি তৎকালীন আওয়ামী সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ, সেই সম্পত্তির দখল ও অবস্থানের ওপর আট সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সালাম মুর্শেদীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৪ মার্চ চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এ আদেশ দেন। অথচ বাড়িটি ঘিরে এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০২৪ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’ উল্লেখ করেন। সম্পত্তিটি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এই বাড়িটি আর সরকার বুঝে নেয় নি। রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় এমন বেশ কিছু সরকারি সম্পত্তি রয়েছে সরকারের, যা আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালীরা এখনও অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।