রাজবাড়ী: ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজবাড়ী পৌর পশুর হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা জমে উঠেছে। দুপুর থেকেই হাটে আগ্রহী ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বিকেল গড়াতেই আরও বাড়েছে। পশুর দাম নিয়ে বিক্রেতাদের কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও, ক্রেতারা তাদের বাজেটের মধ্যে পছন্দের গরু কিনতে পারছেন বলে জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের হাটে মাঝারি আকারের গরুর কদর সবচেয়ে বেশি।
কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, অসুস্থ গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য প্রতিটি হাটে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবার রাজবাড়ী জেলায় মোট ২৯টি স্থানে কোরবানির পশু কেনাবেচার হাট বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি স্থায়ী ও ৯টি অস্থায়ী হাট রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদে ৫৫ হাজার ৭৫০টি পশুর চাহিদা থাকলেও, প্রস্তুত করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৫৬৬টি কোরবানির উপযোগী পশু। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ৩৩ হাজার ৮১৬টি পশু দেশের বিভিন্ন এলাকার কোরবানির হাটে পাঠানো সম্ভব হবে।
এ বছর জেলার ৭ হাজার ৭০৮টি ছোট-বড় খামারে কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার ১১৭টি গরু, ২৩২টি মহিষ, ৫৮ হাজার ৭৪০টি ছাগল, ৪৭৩টি ভেড়া এবং ৪টি অন্যান্য পশু রয়েছে। এবার গরুর চেয়ে ২৮ হাজার ৬২৩টি বেশি ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিকেলে রাজবাড়ী পৌর পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক, নসিমন, ভটভটিসহ নানা যানবাহনে ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন। হাটে আসা গরুর বেশির ভাগই দেশি এবং মাঝারি আকারের গরুর সংখ্যাই বেশি।
রাজবাড়ী পৌর পশুর হাটে গরুর বেচাকেনা চললেও, লোকসানের মুখে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। কুরবান নামের এক গরু ব্যবসায়ী জানান, তিনি হাটে ৭টি গরু এনেছিলেন, যার মধ্যে ৬টি বিক্রি হয়েছে। তবে, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না।
পশুর হাটে বেচাকেনা জমে ওঠায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেক বিক্রেতা। লুৎফর রহমান নামের এক গরু ব্যবসায়ী জানান, তিনি হাটে ১৮টি গরু এনেছিলেন, যার মধ্যে ১৭টি বিক্রি করেছেন।
লুৎফর বলেন, ‘গত তিন হাট বেচাকেনা একদমই কম হয়েছে। আজকের বেচাকেনা ভালো হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, হাটে লাল গরুর প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বেশি, এবং তিনি গরুর দাম মোটামুটি পাচ্ছেন।
রাজবাড়ী পৌর পশুর হাটে এবার বড় আকারের ছাগলও নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। রমজান সরদার নামের এক ছাগল বিক্রেতা হাটে এনেছেন তার বাড়ির পালিত ক্রস তোতা জাতের একটি ছাগল, যার ওজন ৮৭ কেজি।
রমজান জানান, তিনি এই ছাগলটির দাম ৭০ হাজার টাকা চেয়েছেন। তবে, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। তিনি আশা করছেন, ভালো দামেই তার ছাগলটি বিক্রি হবে।
রাজবাড়ী পৌর পশুর হাটে কোরবানির গরু কিনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা। রাব্বি নামের একজন ক্রেতা জানান, তিনি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। তার মতে, ‘গরুর দাম মোটামুটি ঠিক আছে। এই দামে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্যই ভালো।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানিয়েছেন, পশুর হাটে তাদের মেডিকেল টিম সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। হাটে যে গরুগুলো উঠেছে, সেগুলো সম্পূর্ণ সুস্থ। সব মিলিয়ে, এবারের ঈদে রাজবাড়ীর পশুর হাট ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই স্বস্তিদায়ক।
পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সকাল থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত পশুর হাটে পশু থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা সেখানেই অবস্থান করবেন এবং টহল দিবেন। চাঁদাবাজি ও হয়রানি যাতে না হতে পারে, সেদিকে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে এছাড়াও, জাল নোটের বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং এ ধরনের কোনো ঘটনা নজরে এলে দ্রুত পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।
পুলিশ সুপার আশ্বাস দিয়েছেন, জাল নোটের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবারের ঈদে পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশ বদ্ধপরিকর।