ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানীর ঈদের বাকী আর মাত্র একদিন। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকার কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে বেঁচা-বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে। এমন কী গতবারের চেয়ে এবার কোরবানীর পশুর দাম রাজধানীতে একটু কমই বলে মনে করছেন ক্রেতারা। তবে গরুর দামে সকাল থেকে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিকেল নাগাদ আবার তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। শেষ দিনে চড়া দামে কোরবানির পশু বিক্রির অপেক্ষায় আছেন বেপারীরা। আর দাম কমার সুযোগ খুঁজছেন ক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) গাবতলী, তেজগাঁও টেকনিক্যাল মাঠ, দিয়াবাড়ী, উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টর, কচুক্ষেত ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের কোরবানির পশুর হাটগুলো ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে গরুর দাম তুলনা মূলক কম ছিল। ফলে ৬০ থেকে ৮০ হাজারের ভেতরও গরু পাওয়া যাচ্ছিল। দাম কমের খবরে ধীরে ধীরে হাটে বাড়তে তাকে ক্রেতাদের ভিড়। ফলে দাম বাড়িয়ে দিতে শুরু করেন বিক্রেতারা।
আবার অনেক ক্রেতা চাহিদা মত দাম না বলায় বেপারিদেরকে তাদের গরু শেষ দিনের জন্য রেখে দিতে দেখা গেছে। তারা মনে করছেন গরুর সংখ্যা কমে গেলে হয়তো বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। তবে পশুর হাটগুলোতে যথেষ্ট পরিমানে গরু এখনো রয়েছে। ছোট ও মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় সেগুলো দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
তবে বিপাকে পড়েছেন বড় গরুর বেপারিরা। বড় সাইজের গরুর দাম ক্রেতাদের জিজ্ঞেস করতে তেমন একটা দেখা যায়নি। বড় সাইজের গরু ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা চাইলেও কোনো দাম বলছেন না ক্রেতারা।
এছাড়া, এবার এসব হাটগুলোতে ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা খুব কম দেখা গেছে।
ফরিদপুর থেকে পাঁচটি বড় লাল গরু নিয়ে কচুক্ষেতের হাটে এসেছেন বেপারী তরিকুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচটি গরু নিয়ে আসছিলাম। মাত্র একটি বিক্রি করতে পেরেছি। ক্রেতারা বড় গরুর দাম বলছে না। কিছু কমে হলেও দিয়ে দিব। এর মধ্যে আবার বৃষ্টিও বাগড়া দিচ্ছে। এই গরু নিয়ে ফিরতে চাই না।’
গাবতলীর হাটে ময়মনসিংহ থেকে ২০টি ছোট মাঝারি গরু নিয়ে এসেছেন ফরিদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক টাকা ঋণ নিয়ে গরু কিনে গাড়ি ভাড়া দিয়ে হাটে আনছি। এখন যদি বিক্রি না হলে তো পথে বসতে হবে। আগামীকালকের জন্য অপক্ষো করছি। সব কিছুর খরচ বেড়েছে, সেই তুলনায় দাম বলছে না ক্রেতারা।’
দিয়াবাড়িতে কথা হয় গরুর বেপারী ঈসমাইলের সঙ্গে। তিনি ফরিদপুর থেকে ৩০টি গরু এনেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দিনে ১৮টি গরু বিক্রি করেছি। মোটামুটি যা দাম পেয়েছি তাতে আমি খুশি। শেষ দিনের অপেক্ষায় থাকতে চাই না। কারণ, শেষ দিনের অপেক্ষায় থেকে অনেকে পরে বিক্রি করতে পারে না। আগামীকালকের জন্য কয়েকটা রেখে বাকিগুলো আজ রাতের ভেতর বিক্রি করার ইচ্ছা।’

– ছবি : সারাবাংলা
এদিকে রাজধানীর কাফরুল থেকে গরু কিনতে গাবতলীর হাটে এসেছেন ইরফান মিয়া। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘১ লাখ ১৫ হাজারে গরু কিনেছি। দামে সন্তুষ্ট। পরিবার মিলে একটি গরু কিনতে এসেছিলাম। নিজেরাই কোরবানি দিব।’
রাজধানীর কচুক্ষেতের হাট থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন রাশিদুল আলম। তিনি জানান, গরুটির দাম প্রথমে ২ লাখ ৭০ হাজার চেয়েছিল। সেখান থেকে দরকষাকষি করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কিনেছেন তিনি। তবে বড় সাইজের একটি গরু এই দামে কিনতে পেরে খবই খুশি তিনি।
এদিকে, কোরবানীর পশুর হাটকে ঘিয়ে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। সেই সঙ্গে জাল টাকা শনাক্তে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে হাটগুলোতে। এছাড়া, হাটের স্বেচ্ছাসেবীরাও গুরুত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ২১টি পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে অস্থায়ী হাট ১৯টি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসেছে ১০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বসেছে ৯টি অস্থায়ী হাট। আর স্থায়ী দুটি হাট হলো গাবতলী ও সারুলিয়া হাট।