চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় কালুরঘাট সেতুতে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ কয়েকটি গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এতে এক শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাত সোয়া ১০টার দিকে কালুরঘাট সেতুর পূর্বপ্রান্তে কক্সবাজার থেকে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যে নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। মো. তৌহিদুল ইসলাম তুষার (২৫) ও দুই বছর বয়সী মেয়ে আয়শা। তাদের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়। এদের মধ্যে তুষার সিএনজি অটোরিকশা চালক।
আহত অবস্থায় ছয়জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন- আসিফ উদ্দিন বাপ্পী, আসমা আহমেদ, আনজুমান আরা, মনিরুল, মিঠু ও নাজিম।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক সারাবাংলাকে জানান, আহত অবস্থায় সাতজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ছয়জন চিকিৎসাধীন আছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের টিম ঘটনাস্থল থেকে তুষারের লাশ উদ্ধার করে এবং তিনজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্যমতে, কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত সাড়ে ৮টায় রওনা দেয়। রাত ১০টা ৫ মিনিটের দিকে সেটি বোয়ালখালী উপজেলার গোমদণ্ডী রেলস্টেশন অতিক্রম করে কালুরঘাটের দিকে এগিয়ে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেতুতে প্রবেশের পরপরই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আগে থেকে সেতুতে থাকা কয়েকটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনটি সেতুর ওপর থেমে যায়। ট্রেনের নিচে আটকে যায় সিএনজি অটোরিকশা, মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, আইসক্রিম কারখানার একটি পিকআপ ভ্যানসহ অন্ত:ত ৭-৮টি গাড়ি।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে হতাহতদের উদ্ধার করেন। এরপর ট্রেনের নিচে আটকে থাকা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়িগুলো উদ্ধার করা হয়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে উদ্ধার কাজ শেষ হয়।
কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট রেলসেতু দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি সড়কযানও চলাচল করে। এটি একমুখী সেতু। ট্রেন সেতু অতিক্রমের সময় উভয়পাশে সড়কযানের প্রবেশ বন্ধ থাকে৷ তখন অটোরিকশা, মোটর সাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহনগুলো রেললাইন ঘেঁষে সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ থাকে। আবার কখনো সেতুতে আগে থেকে সড়কযান থাকলে ট্রেনও সেতুতে প্রবেশের আগে অপেক্ষমাণ থাকে।
বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ঘটনার সময় একাধিক গাড়ি সেতুর ওপর থাকার পরও ট্রেন সেতুতে প্রবেশ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তাদের অভিযোগ, গাড়িগুলো সবুজ সংকেত পেয়েই সেতুতে উঠেছিল। কিন্তু ট্রেন না থামানোর কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার বিষয়ে কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম প্রান্তের জানে আলীহাট স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘সেতুর ওপর একটি অটোরিকশা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে ট্রেন আসার আগে সব গাড়ি সেতু পার হতে পারেনি। তবে সেতুর পূর্বদিকের শেষপ্রান্তের একদম কাছাকাছিতে ছিল। ট্রেনটি দ্রুতগতিতে সেতুর ওপর উঠে গিয়েছিল।’
ট্রেনটিকে সেতুতে ওঠার আগে থামানোর জন্য লাইনম্যান লাল পতাকা দেখিয়ে সংকেত দিলেও চালক সেটা অমান্য করেন বলে নেজাম উদ্দিন জানান।