সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের সাতক্ষীরা, নওগাঁসহ জামালপুর ও চাঁদপুরের কয়েক গ্রামে আজ উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা।
শুক্রবার (৬ জুন) সকাল থেকে এই জেলাগুলোতে পালিত হচ্ছে ঈদ।
বরাবরের মতো ঈদের জামাত আদায়ের পর মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় পশু কোরবানি দেওয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরার ২০ গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাড়ুখালী আহলে সুন্নাত আল জামায়াত জামে মসজিদে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ইমামতি করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান। একই সময়ে বাওখোলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদে নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা মো. মোহাব্বত আলী।
সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় পশু কোরবানি দেন।
তবে এদিকে ইসলামকাটি, গোয়ালচত্তর, ভাদড়া, ঘোনা, মিরগিডাঙ্গাসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ সকাল সকাল ঈদের জামাতে অংশ নেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করেন এই নামাজে।
স্থানীয় মুসল্লি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সাতক্ষীরায় প্রায় ২০টি গ্রামে সৌদি আরবের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ম অনুসরণ করে আসছি এবং আগামীতেও তা চালিয়ে যাব।’
নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরকে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা জানান এবং গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন পশু কোরবানি করেন। ঈদের এই আনন্দ-উৎসব ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছেন তারা।
ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি করছেন মুসল্লিরা।
নওগাঁ:
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় একটি গ্রামে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সকাল ৮টায় উপজেলার নজিপুর পৌরসভার কলনিপাড়া এলাকায় ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মো. কামারুজ্জামান।
উপজেলার নজিপুর পৌরসভার কলনিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জামাত শুরু হওয়ার আগেই জেলার পোরশা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর, সাপাহার, বদলগাছী ও জয়পুরহাট থেকে থেকে কেউ ভ্যানে আবার কেউ সাইকেল বা মোটরসাইকেলে করে এসে মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেন। পুরুষদের পাশাপশি নামাজে অংশ নেন নারীরাও। পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তারা পশু কোরবানি করেন।
নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নজিপুরে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছি। আমরা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করি, তাই তাঁর দেখানো পথেই ঈদ উদযাপন করছি।’
নামাজ শেষে বিশ্বের সব মুসল্লিদের শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।
জামালপুর:
জামালপুরের সরিষাবাড়ী ও ইসলামপুর উপজেলার অন্তত ১৬টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন আজ।
সকাল ৮টায় দক্ষিণ বলারদিয়ার গ্রামে মাস্টারবাড়ি জামে মসজিদ ঈদগা মাঠসহ চারটি স্থানে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জামাতে অংশগ্রহণ করেন উপজেলার বলারদিয়ার, মুলবাড়ী, সাতপোয়া, সাঞ্চারপাড়, পঞ্চপীর, পাখাডুবি, বনগ্রাম, বালিয়া, বাউসী, হোসনাবাদ, পাটাবুগা, পুটিয়ারপাড়, বগারপাড়, উচ্চগ্রাম, চর লোটাবর ও করগ্রামের পাঁচ শতাধিক মুসল্লি।
এতে আজিম উদ্দিন ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।
চাঁদপুর:
চাঁদপুর জেলার ৪০টি গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে আজ। সকালে দরবার শরীফের দুটি ঈদগাঁহ্ মাঠে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীরা ঈদের নামাজে অংশ নেন।
ঈদের নামাজের প্রথম জামাত সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় অনষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ঈমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।
এরপর দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা মাঠে সকাল ৮টায়। এই জামাতে ইমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী।
ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিমদের শান্তি ও সুরক্ষা এবং দেশের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
চাঁদপুরের ঈদ জামাত।
বরিশাল:
বরিশাল মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে জেলার প্রায় অর্ধশত মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা পশু কোরবানি দেন।
তারা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাহবাদ জাহাগীরিয়া শাহসুফি দরবার শরীফের অনুসারী। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে মিল রেখে তারা রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাসহ ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন।
বরিশাল নগরীর সাগরদীর তাজকাঠী মিয়াবাড়ী এলাকার জাহাগীরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত হয়। এতে কয়েকশ মুসল্লি অংশ নেন।
বরিশাল নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিণাফুলিয়ার চৌধুরীবাড়ি শাহসুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদে অনেকে ঈদের নামাজ আদায় করেন। মসজিদে ঈদের জামাত পরিচালনাকারী হাফেজ মাওলানা মো. আবু জাফর বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা সারা পৃথিবীর মানুষ আমরা একই দিনে রোজা রাখব, ঈদ করব। আর এ নিয়ে দেশের ওলামারা একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্তে আসুক সেই আশাও করছি।’
বরিশাল নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠীর হাজী বাড়ীর জাহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদের আশপাশের প্রায় ৫০০ পরিবারের লোকজন শুক্রবার ঈদ পালন করছে।
একইভাবে বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রায় অর্ধশত মসজিদে চন্দনাইশ দরবারের অনুসারীরা আগাম ঈদ পালন করে। এছাড়া বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশাসহ ৫-৬টি গ্রামের শতাধিক পরিবারে আগাম ঈদ উদযাপন হচ্ছে। জেলার মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় এবং বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, পতাং, লাহারহাট গ্রামে জাহাগিরি সুফী দরবারের আড়াই হাজার অনুসারী রয়েছেন।
ঈদ জামাতে বরিশালের মুসল্লিরা।
লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আযহা উদযাপন করছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবী মুন্সিপাড়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের চর রুদ্রেশ্বর, তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ, চন্দ্রপুর ইউনিয়নের পানি খাওয়ার ঘাট আহলে হাদিস জামে মসজিদ ও একই ইউনিয়নের বোতলা এলাকায় এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ করেন এসব গ্রামের মুসল্লিরা।
মুন্সিপাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘একদিন আগে ঈদ হয় এতে কোনো প্রকার সমস্যা আজ অবধি হয়নি।’
ঈদগাহ মাঠের ইমাম ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘সারা বিশ্বে একই দিন ঈদ হবে। এ বিশ্বাস থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ২০১১ সাল থেকে এ এলাকার মানুষ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, শবে-কদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।’ এতে ঈদের জামাতে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন অন্য জামাতে।
পাবনা:
পাবনা সুজানগর উপজেলার দুলাই বদনপুর গ্রামে ঈদুল আযহা পালিত হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় দুলাই বদনপুর নকিবিয়া দরবার শরীফে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন আশপাশের এলাকাসহ বদনপুর গ্রামের ৫০ থেকে ৬০টি পরিবারের মুসল্লিরা। নামাজে ইমামতি করেন গৌরিগ্রাম ফাতেহা সিনিয়র মাদরাসার ধর্মীয় শিক্ষক মওলানা আবুল কালাম আজাদ।
নামাজ শেষে দেশ ও জাতীর কল্যাণে মুসলিম উম্মতের শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
নামাজ শেষে বিশেষ দোয়া করা হয়।
