বান্দরবান: দীর্ঘদিন পর খুলে দেওয়া হচ্ছে রুমা উপজেলার বগালেক পর্যটন স্পট ও থানচি উপজেলার তিন্দু এবং তমাতুঙ্গি পর্যটন স্পট। আসন্ন ঈদের ছুটির মাঝামাঝিতে পর্যটকের ভ্রমণে এসব স্পট চালু করা হবে। তখন পর্যটকেরা রুমার বগালেক পর্যটন স্পটে ঘুরতে পারবে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে পর্যটন বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ৩৬ বীর রুমা জোনের উপ অধিনায়ক মেজর মেহেদী সরকার এ কথা জানিয়েছেন।
মতবিনিময় সভায় রুমা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী সরকার বলেছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্থানীয়দের দাবির প্রতি বিবেচনা রেখে পর্যটন স্পটগুলো মধ্য থেকে সীমিত পরিসরে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য খোলা নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসন্ন এই ঈদের মাঝখানের সময় থেকে পর্যটকেরা যাতে ঘুরে বেড়াতে পারে, সেই বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। তবে রুমা উপজেলায় সব পর্যটন স্পটে এখন ঘুরে বেড়ানোর কোন সুযোগ নাই।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকেরা রুমা উপজেলায় দর্শনীয় পর্যটন স্পট বগালেক পর্যন্ত যেতে পারবেন। কেউ চাইলে বগালেকের রিসোর্টে গুলোতে রাত্রিযাপনও করতে পারেন। তাছাড়া রুমা সদরে অবস্থিত এবং তিন পার্বত্য জেলার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে পরিচিত –মুনলাই পাড়ার বেস্ট ক্যাম্প ও পাড়ার রিসোর্ট গুলোতে রাত্রিযাপন করতে পারবেন- বাইরে থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা।
রুমা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী সরকার আরও বলেন, এলাকায় স্থানীয়দেরকে শান্তি শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিতে হবে । পর্যটকের আগমণে, সেসব এলাকায় ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, না ঘটলে উপজেলায় সব পর্যটন স্পটগুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে। তাই পর্যটকের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষ করে গাড়ি ড্রাইভার, মোটরবাইক ড্রাইভার ও গাইডের সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে মেজর মেহেদী সরকার বলেন, বাইরে থেকে আসা পর্যটকেরা প্রবেশ পথে তাদের নিরাপত্তার জন্য একবার মাত্র রুমা জোনের চেকপোস্টে নাম ও কাগজপত্র নিবন্ধন করে নিতে হবে।
গত ১৪ মার্চ ২০২৪ হতে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বান্দরবান জেলার থানচি ও রুমা উপজেলায় স্বল্প পরিসরে ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ওই দুই উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সেনাবাহিনীর সুপারিশে জেলা প্রশাসন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বান্দরবান একটি পর্যটন জেলা। এখানকার অর্থনীতি পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। বান্দরবান জেলার অর্থনীতিকে জোরদার করতে এবং এলাকাবাসীর আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়নে এ সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোপূর্বে, বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অনৈতিক কার্যকলাপ রোধ কল্পে এবং জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান সামরিক অভিযান অব্যহত থাকায় এখানে পর্যটকদের ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বর্তমানে সেনাবাহিনীর সফল অভিযানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এলাকার জনগনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা সচল করতে জনপ্রশাসনের সহায়তায় ও জেলা পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটক ভ্রমনের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রুমা উপজেলার বগালেক এবং থানচি উপজেলার তিন্দু ও তমাতুঙ্গি পর্যটন কেন্দ্র পর্যন্ত ভ্রমনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নয়ন সাপেক্ষে বান্দরবান জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রসমূহ ভ্রমনের অনুমতি প্রদান করা হবে।
বান্দরবান জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি এবং পর্যটন কেন্দ্রসমূহ পুনরায় খুলে দেওয়ায় সেনাবাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
রুমা সেনা জোন সদরে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় রুমা সাঙ্গু সরকারি কলেজের প্রভাষক সুইপ্রুচিং মারমা, রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিরা বম, রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংসিনু মার্মা, রুমা অগ্রবংশ অনাথালয়ের পরিচালক উঃ নাইন্দিয়া ভিক্ষু, বম সোসিয়াল কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (বিএসসি-বি) সাবেক সভাপতি লালদুহসাং বম, রুমা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি, রুমা থানা (ওসি)র প্রতিনিধি, সাংবাদিক, টুরিস্ট গাইড এর প্রতিনিধি, জিপ গাড়ি মালিক সমিতির প্রতিনিধি, মোটরসাইকেল সমিতির প্রতিনিধি ও বিভিন্ন রিসোর্টের প্রতিনিধি ও পাড়া প্রধান কারবারি সহ স্থানীয় বাসিন্দারা এই মতবিনিময় সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, জঙ্গি ও কেএনএফ এর বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানকালে ২০২২ সালে ১৭ অক্টোবর রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় পর্যটন স্থানগুলোতে সকল পর্যটকের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। তখন থেকে দুই উপজেলার পর্যটক এর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রুমা উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি।