ঢাকা: হজের গুরুত্বপূর্ণ রোকন বা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে অন্যতম হলো ‘রমি’ বা শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা। ১০ জিলহজে হাজিরা শুধুমাত্র বড় জামারায় (জুমরায়ে আকাবা) ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজে তিনটি জামারাত—ছোট (উলা), মধ্যম (উস্তা) ও বড় (আকাবা)—এ প্রতিটিতে ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। কাবাঘর বাঁ দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে দাঁড়ানো সুন্নত। অন্য দুই জামারায় এদিন কঙ্কর নিক্ষেপ করতে নেই।
শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা পবিত্র হজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধুমাত্র প্রতীকী এক রীতি নয় বরং আত্মশুদ্ধি, আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মহান অনুশীলন।
এই রীতির পেছনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন তার পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দিতে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান তাদের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তখন ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে তাড়িয়ে দেন। সেই ঘটনার স্মৃতিতে এই রীতি পালন করেন হাজিরা।
পাথর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, প্রতিটি পাথর পৃথক পৃথকভাবে নিক্ষেপ করতে হয়। একসঙ্গে কয়েকটি পাথর নিক্ষেপ করলে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। পরবর্তীতে আরও ছয়টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে।

প্রতিটি পাথর পৃথক পৃথকভাবে নিক্ষেপ করতে হয়।
হাদিস শরিফে এসেছে, জাবির (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর হজের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) জামরাতুল কুবরার নিকট এলেন এবং সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলেন। (সহিহ মুসলিম ১/৩৯৯)
৮ জিলহজ মিনায় আগমনের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। সৌদি সরকারের নির্দেশনায় মঙ্গলবার (৩ জুন) রাত থেকেই হজযাত্রীরা মিনায় আসতে শুরু করেন।
মিনার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বিত্ত-বৈভব, কামনা-বাসনাকে পরিত্যাগ করে হজযাত্রীরা আল্লাহর সান্নিধ্য ও ক্ষমা প্রত্যাশা করেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তাদের মন ব্যাকুল। তারা পাপতাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
রাত থেকেই মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে যেতে থাকেন হজযাত্রীরা। কারণ আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়ার আগে কিছু সময় অবস্থান করা ফরজ। এরপর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হন তারা।
মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থানের পর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর শয়তানের স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য যাত্রা শুরু করেছেন হজযাত্রীরা। তারা মুজদালিফা থেকেই শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করেছেন।