সুনামগঞ্জ: ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে সীমান্তে সক্রিয় চোরাকারবারী গ্রুপ। টার্গেট গরু, শাড়ি আর রান্নার মশলা। বিশেষ করে দোয়ারাবাজার ও মধ্যনগর সীমান্ত গরু চোরাকারবারিতে প্রসিদ্ধ। গত ৫ মাসে শুধু বিজিবির হাতে আটক হয়েছে ৪৬৫টি গরু। যার বাজার মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা।
অন্যদিকে শাড়ি ও মশলাসহ অন্যান্য ভারতীয় পণ্য আসে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে। গত ৬ দিনে প্রায় ৫ কোটি টাকার বেশি অবৈধ পণ্য টাস্কফোর্সের মাধ্যমে জব্দ করেছে সীমান্তরক্ষীরা। তবে ঈদ বাণিজ্যে চোরাচালান আগের তুলনায় এবার কমেছে বলে জানান স্থানীয়রা ও প্রশাসন।

– (ফাইল ছবি : প্রতীকী ও সংগৃহীত)
উল্লেখ্য, ঈদ উপলক্ষ্যে চোরাচালান ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বিজিবি। টহল ও নজরদারি বৃদ্ধিসহ বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সর্বশেষ এক অভিযানে দুই কোটি টাকা মূল্যের শাড়ি, জিরা ও ক্রীম জব্দ করা হয়েছে।
এরপরও আসন্ন কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে তৎপরতা বেড়েছে চোরাকারবারিদের। বিভিন্ন কৌশলে দেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে ভারতীয় গরু। জেলার বেশ কয়েকটি পশুর হাটে ভারতীয় গরুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা। সড়ক ও নৌপথ ব্যবহার করে জেলা ছাড়িয়ে গরু ও মহিষ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
মধ্যনগর উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঙ্গালভিটা, কাইতকোনা, গিলাগরা, কলাছড়া, কড়ইবাড়ি, মাটিয়াবন, মহনপুর সহ সীমান্তের অন্তত ১০/১৫টি পয়েন্ট দিয়ে আসছে চোরাচালানের গরু ও মহিষ। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বয়ষ্কদের পাশাপাশি এসব কাজে যুক্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। সীমান্ত পার করে মধ্যনগর থেকে নেত্রকোনা হয়ে চোরাচালানের গরু মহিষ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
একইভাবে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা, মোকামছড়া, প্যাকপাড়াসহ ১০/১২টি পয়েন্ট দিয়ে আসে ভারতীয় চোরাই মাল। এরপর ছাতক ও সুরমা নদী হয়ে উভয়পথে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর গরু ও মহিষ চোরাকারবার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার খামারি রমজান আলী জানান, তার খামারে ২৫টি গরু আছে। ৫টি গরু ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন। দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো পেয়েছেন। কারণ হিসেবে বলছেন, রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে যেসব অবৈধ গরু আমদানি করা হতো, তা অনেকটাই কমেছে। সদর উপজেলার চিনাউরা মালাওগাঁও, আসাউড়া সীমান্ত দিয়ে বিগত বছরের তুলনায় কম গরু এসেছে।
আরেক খামারি জহির মিয়া বলেন, তার খামারের ৬টি গরু বিক্রি করেছেন। পরিচর্চা ব্যয় বাবদ একলক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদি ভারতীয় গরু আমদানি একেবারে কমানো যেত, তাহলে ক্ষতি কাটিয়ে আরও দু’-তিন লাখ টাকা আয় বেশি হতো।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাইরের দেশের গরু মহিষ দেশে আসলে আমাদের জন্য অমঙ্গল। এর জন্য উপদেষ্টাও সতর্ক এবং নিয়মিত দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। কোথায় কার কতটি গরু আছে তা আমাদের সার্ভে করা আছে। কেউ চাইলেই ভারতীয় গরুকে নিজের বলতে পারবে না। জাত দেখেই চেনা যায় কোনটা কোন দেশের গরু। কোরবানীর বাজারে যদি প্রশাসন চায়- চিহ্নিতকরণের জন্য, আমরা আমাদের লোকবল দিয়ে সেই সহযোগিতা করতে পারি।’
বিজিবি ২৮ ব্যাটালিয়ন সুনামগঞ্জের অধিনায়ক একেএম জাকারিয়া কাদির জানান, ‘ঈদকে টার্গেট করে সীমান্তে চোরাকারবারিরা তৎপর হয়েছে। তাদের তৎপরতা ঠেকাতে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন অভিযানে ব্যাপক চোরাচালানের পণ্য জব্দ করা হয়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে স্থলপথের পাশাপাশি নৌপথেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। চোরাকারবারিদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।’