গাইবান্ধা: জেলার সুন্দরগঞ্জে চলতি মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আর লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছুঁই ছুঁই করছে ভুট্টার ফলন। অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকদের অক্লান্ত শ্রমের পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং কৃষি বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণের ফলে বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ও ভুট্টার।
জানা যায়, এবার ২৬ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান এবং ৩ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিপরীতে ২৬ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান এবং ৩ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন চাষীরা। এতে বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আর ভুট্টার ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছুঁই ছুঁই করছে।
জানা যায়, বোরোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৫১ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে চাষ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে সম্ভাব্য ধানের উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৪ মেট্রিক টন।
অন্যদিকে, ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ফলন হয়েছে ৪৩ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।

– ছবি : সারাবাংলা
নদ-নদী বেষ্টিত এ উপজেলার চরাঞ্চলসহ কৃষি মাঠে ঘুরে বোরো ধান ও ভুট্টা কর্তন (কাটা-মাড়াই) কাজে ন্যস্ত কৃষক-কৃষাণীদের সঙ্গে কথা হয়।
তারা বলেন, আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এবারে ফলন দেখে তাদের মন ভরে গেছে। তাই তারা ভুলে গেছেন সকল পরিশ্রমের কথা। তবে দিনমজুর সঙ্কট ও খরচ বেশি হওয়ায় বোরো ধানে তেমন লাভের আশা করা যায় না।
অন্যদিকে ভুট্টা চাষীরা জানান, চরাঞ্চলে ধানচাষের অনুপযোগী জমিতে ভুট্টা চাষে বিঘা প্রতি ৪৫ মণ থেকে ৪৮ মণ ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। ভুট্টা চাষে খরচ কম, অধিক লাভজনক, জমিতে বিনা হালচাষে পাটবীজ ছিটিয়ে শুধু নিড়ানি দিলেই হয়। তবে, ভুট্টা চাষে সময় কিছুটা বেশি লাগে। ভুট্টা চাষ থেকে গো-খাদ্য, জ্বালানীও আহরণ করা সম্ভব।
বিভিন্ন মাঠে ফসলের কাজে ন্যাস্ত কৃষক হারুন- মিয়া, গোলজার হোসেন, নাজমুল হুদা, আকবর আলী, জয়নাল আবেদীন, আলম মিয়া, রাজা মিয়া, সফিউল ইসলাম জানান, তাঁরা কোন জমিতে ভুট্টা আর কোন জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ভুট্টা ক্ষেতে দেখা যায় একটু সময় বেশি লাগে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি চাষাবাদে সার্বিক পরামর্শ প্রদান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধীনে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে সহযোগিতা করাসহ মাঠ পর্যায়ে কৃষি উৎপাদনে সার্বিক ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রাশিদুল কবির জানান, লক্ষ্যমাত্রাতিরিক্ত বোরো চাষ, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ও উদ্বুদ্ধকরণে অত্র দফতর কাজ করে যাচ্ছে। ভুট্টা চাষ লাভজনক করা এবং চরাঞ্চলের জমিগুলোতে (ধান চাষের অনুপযোগী) উৎপাদন বাড়াতে আমাদের অবিরাম প্রচেষ্টা চলমান।
তিনি আরও বলেন, কৃষকরা এখন অনেকাটই উৎপাদনমুখী হয়েছে। অধিক লাভজনক ও উচ্চ ফলনশীল ফসল ফলাতে তারা প্রতিযোগিতামূলক ফসলের পরিচর্যা করছেন। পরামর্শ নিতে তাদের আগ্রহ বেড়েছে। পাশাপাশি আমরাও সচেষ্ট। এর ফলে আগামীতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে কৃষদের আরো আগ্রহ বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।