চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাদের ঘোষিত সময় বিকেল ৫টার মধ্যেই নগরীর কোরবানির বর্জ্য প্রায় অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ সময়ের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার মেট্রিকটন বর্জ্য সংগ্রহ করে আবর্জনাগারে ফেলা হয়েছে। তবে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে থাকা বাকি বর্জ্য অপসারণে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাত পর্যন্ত কাজ করবেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন কোরবানির পর ৬ থেকে ৮ ঘন্টায় বিকেল ৫টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। দিনভর মেয়র নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারক করেছেন।
মেয়রের বেঁধে দেয়া সময়সীমা ধরে শনিবার (৭ জুন) সকাল ৮টায় কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ শুরু করেন চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। ভ্যান নিয়ে প্রথমে পাড়া-মহল্লায় বাসাবাড়ির সামনে, অলিগলির সড়ক থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন কর্মীরা। সেই বর্জ্য নেয়া হয় মূল সড়কে অপেক্ষমাণ ট্রাকে। এরপর ট্রাকসহ বিভিন্ন ভারী যানের মাধ্যমে সেগুলো নেয়া হয় আবর্জনাগারে। বর্জ্য নেয়ার সাথে সাথে পানি ও ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে কোরবানির স্থানটিকে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
মোট ৩৬৯টি যানবাহন নিয়ে চসিকের ৪ হাজার ২০০ কর্মী নগরীজুড়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়েছেন। নগরীকে দুটি জোনে ভাগ করে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর-দক্ষিণের ২২টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আরেফিন নগরের আবর্জনাগারে। পতেঙ্গা-বন্দর এলাকার বাকি ১৯টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে হালিশহরে আবর্জনাগারে। নগরীর দামপাড়ায় চসিকের খোলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পুরো কার্যক্রম তদারক করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

শনিবার চট্টগ্রামে কোরবানির বর্জ অপসারণ কার্যক্রম – ছবি : সারাবাংলা
দুপুর ১টার দিকে নগরীর কাজির দেউড়ি, আসকার দিঘীর পাড়, জামালখান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলো এর মধ্যেই পরিচ্ছন্ন করেছেন চসিকের কর্মীরা। কোথাও কোথাও কাঁচা চামড়ার স্তূপ রাখায় কিছু রক্ত বা বর্জ্যের অবশিষ্টাংশ ছিল। সেগুলোও পরিস্কার করতে দেখা গেছে। তবে অলিগলিতে এসময় কোথাও কোথাও পশুর জিহ্বা, লেজ, মাথার খুলি, হাড়, রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বিকেল পাঁচটার দিকে এসব এলাকা ঘুরে অবশ্য অলিগলিও প্রায় পরিচ্ছন্ন দেখা গেছে। তবে দুপুরের পরও কিছু কোরবানি হয়েছে। সেগুলোর বর্জ্য সন্ধ্যার দিকেও দেখা গেছে। একইসঙ্গে পরিস্কার করতেও দেখা গেছে।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্ম্মা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র মহোদয়ের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে মানে বিকেল ৫টার মধ্যে আমরা ৯৫ শতাংশ ক্লিন করে ফেলেছি। কিছু কোরবানিদাতা প্রতিবছরের মতো এবারও দুপুরের পর কোরবানি দিয়েছেন। সেগুলোর বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। অলিগলিতে যেখানেই তথ্য পাচ্ছি, সেখান থেকে গিয়ে বর্জ্য নিয়ে আসা হচ্ছে। রাতে যতক্ষণ পর্যন্ত পুরো শহর শতভাগ ক্লিন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মীরা কাজ করবেন।’
চসিকের এ কর্মকর্তা জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের হিসেবে প্রায় ৯ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। আরও ৫০০ টনের মতো বর্জ্য সংগ্রহ হবে বলে তাদের ধারণা।

শনিবার চট্টগ্রামে কোরবানির বর্জ অপসারণ কার্যক্রম – ছবি : সারাবাংলা
এদিকে বিকেল তিনটার দিকে নগরীর নুর আহমদ সড়কের বিমান অফিসের সামনে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। মেয়র নগরীর বেশিরভাগ কোরবানি পশুবর্জ্য দুপুর দেড়টার মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
চসিক মেয়র বলেন, ‘সকাল থেকে বাকলিয়া, চকবাজার, লালখান বাজার, কাপাসগোলা, দামপাড়াসহ অনেক জায়গায় আমি ঘুরেছি। ১১টার মধ্যে অনেক জায়গায় ক্লিন হয়ে গেছে। আবার যখন ঘুরে আসছিলাম দেড়টার দিকে বেশিরভাগ জায়গায় কিন্তু ক্লিন করে ফেলেছে। আশা করছি ৫টার মধ্যে ক্লিন করতে পারব। যারা কোরবানি দিয়েছেন, তারাও সবাই চট্টগ্রাম শহরকে সুন্দর রাখার জন্য পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়েছেন।’