হালিশহরে জন্ডিস পরিস্থিতি চরমে
২৯ জুন ২০১৮ ২১:১৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে হালিশহরের পাশের নতুন নতুন এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে জন্ডিস। জেলা সিভিল সার্জন এখন পর্যন্ত ৬২৪ জন জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং তিন জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার, মৃতের সংখ্যাও বেশি।
এই অবস্থায় হালিশহরসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দায়সারা আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক-প্যাথলজির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৬২৪ জন জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই হেপাটাইটিস-ই ভাররাসে আক্রান্ত। কিছু সাধারণ জন্ডিস রোগীও আছেন। পরিস্থিতি এখন ভয়বাহ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানহাট ঈদগাহ এলাকায় সুবসতি কামিনী ভবনের ৫৬টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৪৫টি ফ্ল্যাটে বাসিন্দা আছেন। সেখানে প্রায় প্রতিটি ফ্ল্যাটেই জন্ডিসে আক্রান্ত রোগী আছেন।
ওই ভবনের বাসিন্দা চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ সেলিনা শেলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমার দুই ছেলে ইরাবান তূর্য এবং নিবিড় নীলিমও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের এই ভবনে কমপক্ষে ৪০ জন জন্ডিস-টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভুগছে।’
সেলিনা শেলী বলেন, ‘পুরো এলাকায় ঘরে ঘরে জন্ডিস-টাইফয়েড হচ্ছে। অন্যান্য দেশ হলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হত। এখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কি করছে আমরা জানি না।’
হালিশহর জে ব্লকের পাশে গোল্ডেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জাহাজের নাবিক শামসুল আজম খানের স্ত্রী নাসরিন আক্তার লিলি সারাবাংলাকে জানান, ‘ঈদের দুইদিন আগে তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত জাহান জ্বরে আক্রান্ত হন। ঈদের পরদিন তাকে প্রথমে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে, এরপর ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। নুসরাত মারা গেছে।’ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েই নুসরাতের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তার মা।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, শুরুতে হালিশহর এলাকায় পানিবাহিত রোগ সীমাবদ্ধ ছিল। এখন আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, ঈদগাহ, বেপারিপাড়া, বৌবাজারসহ আরও কয়েকটি এলাকার মানুষ জন্ডিসসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এদিকে শুক্রবার (২৯ জুন) চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের খালেদা ভিলায় ২৬ জন জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে যান সিভিল সার্জন। আক্রান্ত ২৬ জনের মধ্যে আসিফুল হাসান গত ২০ জুন মারা যায়। এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন বাকিরা। বাড়িটির মালিকসহ ছয়জনও জন্ডিস আক্রান্ত হয়। আক্রান্তরা বাড়িতে ব্যবহৃত পানি থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করেন সিভিল সার্জনকে।
জানতে চাইলে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, ওয়াসার লাইন থাকলেও অনেকেই গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করছেন। পানি সংরক্ষণের ট্যাংকগুলো অপরিস্কার।
গত এপ্রিলের শুরুতে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় পানিবাহিত জন্ডিস ও ডায়রিয়া রোগের প্রার্দুভাব সৃষ্টি হয়। এক মাস ধরে হালিশহরের ঘরে ঘরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর ২ মে সেখানে পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিম এবং সিভিল সার্জন। তারা সেখানে গিয়ে কয়েক’শ মানুষ ডায়রিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে (বিআইটিআইডি) চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পান। তখনও পানির নমুনা পরীক্ষা করে ওয়াসাকে দায়ী করা হয়। তবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে সেটি নাকচ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎকেন্দ্র-কারখানার বর্জ্যে হালদায় ভয়াবহ দূষণ
সারাবাংলা/আরডি/এমও