Monday 09 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢলে টইটুম্বুর টাঙ্গুয়া, ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির ডাকে হাজারো পর্যটক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ জুন ২০২৫ ০৮:৩১

সুনামগঞ্জ: মেঘালয়ের ঢল নেমে আসা পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে অপরূপ টাঙ্গুয়ার হাওর। বর্ষায় এর সৌন্দর্য যেন ভিন্ন এক মাত্রা পেয়েছে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল ও করচ গাছগুলো জলের বুকে তৈরি করেছে সবুজের আল্পনা। দূরের পাহাড়ের সারি এসে মিশে গেছে এই সুবিশাল জলরাশিতে, যা মন জুড়িয়ে দেয় নিমিষেই। হাওরের ঢেউ আর পাখির অবিরাম কলতান সব মিলিয়ে এক ভিন্ন রূপের টাঙ্গুয়া দেখতে এবারের ঈদের লম্বা ছুটিতে হাজারো পর্যটকের ঢল নামছে।

অনেকেই ছুটির আগেই নিজেদের পছন্দের পর্যটকবাহী নৌযানগুলো বুকিং করে রেখেছেন, যেন প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর রূপ উপভোগের সুযোগ হাতছাড়া না হয়।

বিজ্ঞাপন

এই মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণ অপেক্ষাকৃত স্বাচ্ছন্দ্যময়। আর তাই কোরবানির ঈদের এই ছুটিতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই জলরাশিতে এবার পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরের ৯০টি বিলাসবহুল বোটসহ সমস্ত দেশীয় বা কান্ট্রি বোটও ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের বরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বোট পরিচালনাকারীরা।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা সুনামগঞ্জ জেলা শহরে পৌঁছে সাহেববাড়ী ঘাট, বৈঠাখালী ঘাট, বা ওয়েজখালী ঘাট থেকে বোটে উঠছেন। সুরমা নদীর দুই পাড়, করচার হাওর এবং পথের ছোট-বড় হাওরের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে তারা চলে যাবেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। আবার কেউ কেউ সুনামগঞ্জ জেলা শহরের কাছের আব্দুজ জহুর সেতু পেরিয়ে তাহিরপুরের আনোয়ারপুর ব্রিজের পাশের ঘাট অথবা তাহিরপুর থানার সামনের ঘাট থেকেও টাঙ্গুয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছেন। বিলাসবহুল বোটগুলো হাওর ভ্রমণকে আরও আরামদায়ক করে তুলেছে।

হাউসবোট ও দেশীয় বোট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দশ দিনের দীর্ঘ ঈদের ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওরে আসবেন, এমনটা ভেবেই বোটগুলো নতুন রঙ, নতুন পর্দা, এবং নতুন বিছানার চাদরসহ নানা প্রস্তুতি নিয়ে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেছে। নৌ-মালিকদের আশাও এবার পূর্ণতা পেয়েছে; ৯ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত, এই ছয় দিনের জন্য প্রায় সব বোটই অগ্রিম ভাড়া হয়ে গেছে।

জানা গেছে, বিলাসবহুল হাউসবোটের দুই দিনের প্যাকেজ এবার জনপ্রতি ৪ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই প্যাকেজে থাকছে পাঁচ বেলা ভাত, চার-পাঁচবার নাস্তা, চা-কফি এবং পানি।

এছাড়া, এই প্যাকেজের মধ্যেই থাকছে নীলাদ্রি, শিমুল বাগান, বারেকের টিলা, জাদুকাটা নদী, টাঙ্গুয়া ওয়াচ টাওয়ার এবং লাকমাছড়া ঘোরার সুযোগ।

হাউসবোট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খাবারের মেন্যুতে ভাতের সঙ্গে থাকছে হাওরের তাজা মাছ, হাঁসের মাংস, কোয়েল পাখির মাংস, খাসির মাংস, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, ভাজি ও সবজি।

সুনামগঞ্জ হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত আকন্দ বলেন, তাদের ৯০টি হাউসবোটের প্রায় সবকয়টির বুকিং শেষ। তিনি জানান, ‘এবার সকল বোটেই অন্যান্য প্রস্তুতির পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য লাইফ জ্যাকেট ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।’

তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে টাঙ্গুয়ায় পর্যটকদের সম্ভাব্য ভিড়ের কথা মাথায় রেখে পুলিশকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘নৌ-পুলিশ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশও হাওরে কাজ করবে। তাহিরপুরের আনোয়ারপুর ঘাট ও থানা ঘাটে পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং নিয়মিত টহলও চলবে।’

পর্যটকদের সুবিধার জন্য ঘাটগুলোতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর টাঙিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান ওসি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেছেন, ‘টাঙ্গুয়ায় ভ্রমণ নীতিমালা মেনে সকল বোটকে হাওরে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে।’ তিনি জানান, এখন বর্ষা মৌসুম চলছে, তবে এখন পর্যন্ত টাঙ্গুয়ায় ভ্রমণপিপাসুদের যেতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে বা হাওরে কোনো বিপদ হতে পারে এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে পর্যটকবাহী বোটগুলোকে যেতে নিরুৎসাহিত করা হবে।’

সারাবাংলা/এসআর

ঈদের ছুটি টাঙ্গুয়া টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যটক বর্ষা সুনামগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর