Monday 09 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিডিবি’র সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের আন্তর্জাতিক দরপত্রে সাড়া মেলেনি বিদেশি কোম্পানির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ জুন ২০২৫ ১৬:১৮ | আপডেট: ৯ জুন ২০২৫ ১৬:৫৩

ঢাকা: সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর নতুন উদ্যোগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো সাড়া দেয় নি। দরপত্রে অংশ নেয়নি বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সক্রিয় চীনা কোম্পানিগুলোও। বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত চুক্তি আকস্মিক বাতিল, সরকারের নীতিগত অবস্থান নিয়ে আস্থার ঘাটতি এবং ঘোষিত দরপত্রে সরকারি কোনো গ্যারান্টি (সভরেন গ্যারান্টি) না থাকার কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো আগ্রহ দেখায় নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত চারটি আন্তর্জাতিক দরপত্র প্যাকেজ আহ্বান করেছিল পিডিবি। এর আওতায় দেশের ৫৫টি স্থানে মোট ৫ হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব দরপত্রের বিপরীতে গত সোমবার (২ জুন) ৩৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি গ্রিড-সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রথম প্যাকেজের দরপত্র খোলে পিডিবি। ছয়বার সময় বাড়ানোর পর অনুষ্ঠিত এ দরপত্রে কোনো বিদেশি কোম্পানি অংশ নেয়নি। মাত্র ২০টি দরপত্র জমা পড়েছে, যার সবগুলোই দেশীয় কোম্পানি। অথচ এর আগে বাতিল হওয়া চুক্তিতে অন্তত চারটি চীনা কোম্পানি ‘লেটার অব ইন্টেন্ট’ (এলওআই) পেয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

সূত্রগুলো মতে, হঠাৎ করে পূর্বের পুরো চুক্তি বাতিল ঘোষণা বিদেশিদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে, যার প্রভাব পিডিবি’র দরপত্রে পড়েছে। এছাড়া পিডিবি’র ওই দরপত্রে কোনো সভরেন গ্যারান্টি ছিল না, যা আগের চুক্তিতে ছিল এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। অন্যান্যের মধ্যে জমির সংকট, টেকসই আর্থিক মডেলের দুর্বলতা, আর্থিক প্রণোদনার ঘাটতি এবং প্রকল্পের ব্যাংকের অর্থায়ন লাভের সুযোগ না থাকা ইত্যাদি কারণেও বিদেশি কোম্পানিগুলো পিছু হটেছে।

জানা যায়, বিগত সরকার ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন,২০১০’-এর আওতায় ৩১টি চুক্তি সম্পাদন করেছিল এবং সেখানে চীন, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের অনেক বিদেশি যৌথ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের কথা বলে গত ২০২৪ সালের নভেম্বরে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’-এর আওতায় সইকৃত ৩১টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। বাতিল হওয়া এসব সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নকশা, স্থাপন, সরবরাহ, পরীক্ষা ও কমিশনিংসহ নানা পর্যায়ের কাজ সম্পাদনের চুক্তি ছিল। জমি অধিগ্রহণ এবং অর্থায়নের দায়িত্বও ছিল সংশ্লিষ্ট স্পন্সরদের ওপর।

সূত্রমতে, এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নীতির বিষয়ে এক ধরনের ভুল বার্তা গেছে এবং তাদের মধ্যে বড় ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে জমি কেনা ও অফিস স্থাপনায় অর্থ বিনিয়োগ করেছিল।

প্রথম প্যাকেজে প্রাপ্ত দরপত্রগুলোর বিষয়ে সূত্র জানায়, ৩৫৩ মেগাওয়াট মোট সক্ষমতার ১২টি গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের বিপরীতে ৯৫টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়েছে মাত্র ২০টি। আর এই ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ১৮৮ মেগাওয়াট মোট সক্ষমতার মাত্র ৬টি কেন্দ্রের জন্য মাত্র একটি করে দরদাতা অংশ নিয়েছে। এই ৬ দরদাতার মধ্যে একটি দেশীয় অবকাঠামো কোম্পানি ৩০ মেগাওয়াট এবং ৪৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি প্রকল্পের একক দরদাতা।

এছাড়া টেক্সটাইল এবং সিরামিক শিল্প সংশ্লিষ্ট কিছু কোম্পানিও এই দরপত্রে অংশ নিয়েছে। ১০ মেগাওয়াটের প্রকল্পে সর্বোচ্চ চারটি দরপত্র জমা পড়ে এবং ২৫ মেগাওয়াটের প্রকল্পে জমা পড়েছে তিনটি দরপত্র।

মৌলভীবাজারে প্রস্তাবিত ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্পে তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে।

সারাবাংলা/আরএস

আন্তর্জাতিক দরপত্র পিডিবি বিদেশি কোম্পানি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর