পঞ্চগড়: ঈদ মানে যেখানে আনন্দ আর উৎসবের বন্যা, সেখানে কিছু পরিবারে ঈদ আসে শুধুই কান্না আর শূন্যতা নিয়ে। সেই শোক আর না-পাওয়ার বেদনার মাঝে কিছুটা ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিতে এক ব্যতিক্রমী ঈদ উৎসবের আয়োজন করেছিল পঞ্চগড় জেলা বিএনপি।
রোববার (৮ জুন) দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর এলাকায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ও শহিদ পরিবারগুলোর সদস্যদের নিয়ে ঈদ উৎসব আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনে শহিদ সাজুর স্ত্রী শারমিন আক্তার, শহিদ সাগরের বাবা রবিউল ইসলাম, শহিদ শাহাবুল ইসলাম শাওনের মা, শহিদ আরেফিনের পরিবার ও জুলাই আন্দোলনে আহতদের স্বজনরা।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় বক্তারা শুধু তাদের হারানোর বেদনা নয়, বরং রাষ্ট্রের কাছে বিচার ও স্বীকৃতির দাবি তুলে ধরেন।
নিহত শাহাবুল ইসলাম শাওনের মা বলেন, ‘ছেলেকে ছাড়া ঈদ কি ভালো হয়? শেখ হাসিনার কারণে আমার বুকটা খালি হয়েছে। আমি তার বিচার চাই, আমি ফাঁসি চাই।’
শহীদ সাগরের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন,‘আমার ছেলেকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।’ তিনি ছেলে হত্যার বিচারের দাবি করেন।
আয়োজক ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘এই শহিদ পরিবারগুলো আমাদের গর্ব। তারা গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছেন। আমরা তাদের পাশে সবসময় ছিলাম, আছি, থাকব।’
অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবারের সদস্যরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি (ফাঁসি) দাবি করেন। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের প্রিয়জনদের হত্যা করা হয়েছে।
এই ঈদ মিলন শুধু একটি সামাজিক অনুষ্ঠান ছিল না, এটি ছিল প্রতিবাদের এক নীরব মঞ্চ। এখানে ছিল কান্না, ক্ষোভ, সহমর্মিতা এবং সংহতির স্পষ্ট প্রকাশ।
ঈদের আনন্দ যখন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সমাজের এমন কিছু পরিবার থাকে, যারা কেবল বেঁচে থাকার লড়াই করে না, বরং বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পাওয়ার লড়াইও চালিয়ে যায়। পঞ্চগড় জেলা বিএনপির এই উদ্যোগ সেই পরিবারগুলোর অন্তত কিছুটা কষ্ট হালকা করে দিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর দায়িত্ববোধের এক মানবিক উদাহরণ হয়ে উঠেছে।