চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল আজহার উৎসবের মধ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে। নানা বয়সের, নানা শ্রেণিপেশার বিনোদন পিয়াসী মানুষ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতেছেন।
শুধু চট্টগ্রাম নগরী কিংবা আশপাশের এলাকা নয়, ঢাকাসহ দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন ভিড় করছেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়’সলেক, চিড়িয়াখানা, সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী, মীরসরাইয়ের মহামায়াসহ আরও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। গত দু’দিন ধরেই এমন চিত্র সাগর-পাহাড়ঘেরা বন্দরনগরীর নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানগুলোর।
শনিবার (৭ জুন) কোরবানির দিনে ব্যস্ততার কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে লোকজনের আনাগোণা স্বাভাবিকভাবেই কম ছিল। কিন্তু রোববার ও সোমবার দিনভর মানুষ ছুটেছে সেখানে, হাজার, হাজার মানুষ।
নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সোমবার সকাল থেকেই মানুষের আনাগোণা শুরু হয়। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেলে চড়ে তরুণ-যুবকেরা গেছেন। অনেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়েও বেড়াতে গেছেন। দুপুরের পর থেকে রীতিমতো সৈকতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
সৈকতের বালুচরে শিশু-কিশোরদের ছুটোছুটি, সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালী, ফুচকাওয়ালার হাঁকডাক, কাঁকড়া ভাজা, গরম পিঁয়াজুর স্বাদ- সব মিলিয়ে এ এক অনন্য বিকেল ! গোধূলিবেলায় তরুণীদের সেলফি, পাথরে বসে তরুণদের গিটার বাজিয়ে গান আনন্দ সম্মিলনকে যেন ভিন্নমাত্রা দিয়েছে।
নগরীর হাজারী লেইন থেকে স্ত্রী ও দুই কিশোরী মেয়েকে নিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যান পারফিউম ব্যবসায়ী তারেকুল হাবিব। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি রাউজানে। কোরবানিতে বাড়িতে ছিলাম সবাই। সোমবার (৯ জুন) সকালে এসে বিকেলে সবাইকে নিয়ে বের হয়েছি।’
কলেজ শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পতেঙ্গা সৈকত, কক্সবাজার সৈকত আমাকে খুব টানে। প্রতিবার ঈদে পতেঙ্গায়, না হলে কক্সবাজারে যাবার চেষ্টা করি।’
চট্টগ্রামে ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আজহা- সবসময় সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে। দুটি পাশাপাশি বিনোদন স্পট।
পাহাড় ও হ্রদবেস্টিত ৩৩৬ একরের ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে এবারও দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই আছে।পাহাড়ের বুক চিড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের আঁকাবাঁকা লেক, ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডের কৃত্রিম সমুদ্র, বেসক্যাম্প, অ্যামিউজমেন্ট পার্কের রাইড- সবখানেই মুখর। তবে সবচেয়ে বেশি সমাগম হয়েছে কৃত্রিম সমুদ্রে, যেখানে হাজারো নারী, পুরুষ, শিশু আনন্দে মেতেছিলেন। ডিজে গানের সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের পানিতে দাপাদাপি, হইহুল্লোড়ে দিনভর অন্যরকম আবহ তৈরি হয়।
ওয়ান ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার টানা দশদিনের বন্ধ। এত লম্বা বন্ধ আগে পাইনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোরবানির দিন বাদে প্রত্যেকদিন ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরবো। গতকাল পতেঙ্গা গিয়েছিলাম। আজ ফয়’সলেক এসেছি। রাঙামাটি যাবার ইচ্ছে আছে।’
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক পরিচালনাকারী কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের পরদিন থেকে লোকজন আসতে শুরু করেছেন। প্রথমদিন রোববার প্রায় সাড়ে তিন হাজার দর্শনার্থী এসেছেন। আজ (সোমবার) আট হাজারের মতো প্রবেশ করেছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন। আমাদের রেস্ট হাউজ পুরো বুকড। আশা করছি আগামী শনিবার সরকারি বন্ধের শেষদিন পর্যন্ত এমন সমাগম থাকবে।’
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন হাজার, হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে। বিরল সাদা বাঘ, সিংহ, জলহস্তী, নানা জাতের পাখি টানছে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সীদের।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিন ২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। পরদিন ১০ হাজার, আজ (সোমবার) ১৩ হাজারের মতো দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন।’