হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিটের ২১ জঙ্গির ১৩ জনই মৃত!

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: দীর্ঘ তদন্তের পর অবশেষে গুলশান হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা মামলার চার্জশিট দেওয়ার চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হবে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলা’কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিট প্রস্তুতের কাজ শেষ। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে তা আদালতে জমা দেওয়া হবে।

অভিযোগপত্রে কাদের নাম রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার্জশিটে যাদের নাম আনা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন হামলা ও অভিযানে নিহত। কয়েকজন কারাগারে, আর বাকিরা পলাতক।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন সহকারী কমিশনার (এসি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলা’কে বলেন, চার্জশিটে মোট ২১ জঙ্গির নাম আনা হয়েছে। এরা সবাই জঙ্গিবাদে জড়িত ছিল এবং অন্যদের সম্পৃক্ত করে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এরা হামলায় অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে কার কী ভূমিকা ছিল— চার্জশিটে সেটাও তুলে ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২১ জঙ্গির মধ্যে ৫ জঙ্গি সরাসরি হলি আর্টিজান হামলায় মারা গেছে। এরা হলো— রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামি মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল।

সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, ২১ জঙ্গির মধ্যে ৮ জন বিভিন্ন অভিযানে মারা গেছে। এর মধ্যে মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সিটিটিসির অভিযানে তামিম চৌধুরী, আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে সারোয়ার জাহান, মোহাম্মদপুরে ডিবির সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারজান, আজিমপুরে সিটিটিসির অভিযানে তানভীর কাদেরী, রূপনগরে সিটিটিসির অভিযানে মেজর (অব.) জাহিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অপারেশনে বাসারুজ্জামান চকলেট ও ছোট মিজান এবং তারেক কল্যাণপুরের জঙ্গি অভিযানে মারা যায় আবু রায়হান।

ওই সহকারী কমিশনার বলেন, বাকিদের মধ্যে কারাগারে আছে ছয় জন। হাসনাত করিমসহ সাত জন কারাগারে আছে। যেহেতু হাসনাত করিমের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না, সেক্ষেত্রে ছয় জনের নাম ধরা হচ্ছে। কারাগারে থাকা ছয় জন হলো— সোহেল মাহফুজ, বড় মিজান, রিগ্যান, রাশেদুল ইসলাম, হাদিসুর রহমান সাগর ও রাজীব গান্ধী।

তিনি বলেন, ২১ জঙ্গির মধ্যে পলাতক দুই জঙ্গি হলো—  শরিফুল ইসলাম খালিদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

সিটিটিসি সূত্র জানিয়েছে, ২১ জনের বাইরে তালিকায় নাম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে হাসনাত করিমের। তাহমিদের নাম আগেই বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে চার্জশিটে ২৯ জনের নাম থাকছে— অনেকেই এমন মন্তব্য করলেও সিটিটিসির সূত্রটি এরকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানি, ১ ভারতীয় ও ২ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হন। রাতভর সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। পরে সেখান থেকে পাঁচ জঙ্গির সাথে রেস্তোরার প্রধান শেফ সাইফুল ইসলামের লাশ উদ্ধার হয়। আর সাইফুলের সহকারী জাকির হোসেন শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

একই ঘটনায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেডের আঘাতে রেস্তোরাঁর বাইরে নিহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান।

পাঁচ জঙ্গিসহ শেফ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী শেফ শাওনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে দীর্ঘদিন পরে থাকার পর বেওয়ারিশ ঘোষণা করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর/জেডএফ