ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষ। এই বৈঠক থেকে আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবেন দুই নেতা— এমন প্রত্যাশা সবার। বৈঠকটি শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডন সময় সকাল ৯টা, বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক ওয়ান টু ওয়ান হাবে, নাকি আর কেউ থাকবে, সে ব্যাপারে কোনো পক্ষ থেকে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। তবে, সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের শুরুটা হবে ওয়ান টু ওয়ান। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে দুই পক্ষ থেকে দুই বা তিন জন যুক্ত হতে পারেন।
দলীয় সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার নির্দেশ মেনে ড. ইউনূসের সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রে সহনীয় পন্থা অবলম্বন করবেন তারেক রহমান। এক্ষেত্রে ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন’-এর জায়গা থেকে সরে এসে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে জোর দেবে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা এতে সম্মত হলে নির্বাচনের বিষয়টি সেটেল হয়ে যেতে পারে আজই।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ভিডিও ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের সামনের রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য। একজন বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান, অন্যজন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান। তারা সব কিছু নিয়েই আলাপ করবেন। মিটিংয়ের প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার একজন অফিসিয়ালও এসেছিলেন, তার সঙ্গেও কথা হয়েছে।’
‘‘আমরা আশা করছি সকাল ৯টার মধ্যেই উনারা আসবেন। আসার পরে ওয়ান টু ওয়ান মিটিং হবে। উনারা যদি মনে করেন আর কেউ থাকবেন, সেটা উনারাই ঠিক করবেন’’— বলেন শফিকুল আলম।
এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক সামনে রেখে ঢাকা-লন্ডনের উত্তেজনার মধ্যে বুধবার (১১ জুন) লন্ডন পৌঁছেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ধারণা করা হচ্ছে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকের শেষাংশে উপস্থিত থাকবেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরভেজ মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ওয়ান টু ওয়ান মিটিং হোক।’’
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিছবাউজ্জামান সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি তাদের দুই জনের মধ্যেই বৈঠক হবে। যদি সরকারের পক্ষ থেকে অন্য কেউ থাকেন তাহলে বিএনপির পক্ষ থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী থাকতে পারেন।’’
এদিকে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের এ বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গ নিচ্ছে। বিএনপির মহাসচি থেকে শুরু করে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বৈঠকের গুরুত্ব ও ফলাফল নিয়ে কথা বলছেন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বর্তমানে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বা অবস্থান, তাতে এটা (ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক) একটা বড় ইভেন্ট, গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। এটার গুরুত্ব অনেক বেশি। অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।’’
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন-সংস্কার এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’’
অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে এভাবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হবে বলে মনে করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দলটির মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গুরুত্বপূর্ণ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড একটি বহুমাত্রিক রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, মনস্তাত্ত্বিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়। প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে একটি নির্দিষ্ট দলের প্রধানকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাতে রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে দেশের পরিস্থিতি সেই দলের প্রতি ঝুঁকে যাবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা স্পষ্টত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করবে। অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে নিরপেক্ষ আচরণ প্রত্যাশা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।’’