ঢাকা: বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও আজ কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছে বায়ুমান সূচক। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বায়ুর গুণমান সূচক (AQI)-এর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে রাজধানী ঢাকা ছিল বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ৪০তম স্থানে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পরিবেশ বিশ্লেষণ সংস্থা আইকিউ এয়ার-এর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ৬৯ যা ‘সহনীয়’ বা ‘moderate’ শ্রেণিতে পড়ে। এই মাত্রার বাতাস সাধারণ জনগণের জন্য মোটামুটি নিরাপদ হলেও যাদের শ্বাসতন্ত্র দুর্বল বা যেকোনো ধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে, তাদের জন্য কিছুটা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৈশ্বিক দূষণ তালিকায় শীর্ষে কারা?
একই সময়ের রেকর্ড অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার মেদান শহর (স্কোর ১৬০)। দ্বিতীয় অবস্থানে ভারতের রাজধানী দিল্লি (১৫৬), তৃতীয় ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা (১৫৪), চতুর্থ চীনের চেনডু (১৫৩) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ (১৫১)।
বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের অন্যতম বড় উৎস হিসেবে শিল্প দূষণ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকে দায়ী করা হয়। ঢাকার ক্ষেত্রে এসব কারণ ছাড়াও অপরিকল্পিত নগরায়ন, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো এবং গণপরিবহনের আধুনিকায়নের অভাব বায়ুদূষণকে আরও জটিল করে তুলেছে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
পরিবেশবিদরা বলছেন, ঢাকায় বায়ুদূষণের সাময়িক এই উন্নতি বর্ষার মৌসুমি প্রভাবের কারণে হতে পারে। বৃষ্টিপাত বাতাসে ভাসমান ধুলিকণাকে ধুয়ে ফেলায় সাময়িকভাবে বায়ুমান উন্নত হয়। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়।
পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক পরিচালক এবং জলবায়ু গবেষক মো. আলী হোসেন বলেন, “বর্ষার দিনে বাতাস কিছুটা বিশুদ্ধ মনে হলেও শুষ্ক মৌসুমে আবার পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার ও নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”
স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যায়
আইকিউ এয়ার এর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুতে PM2.5 নামের অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার ঘনত্বই দূষণের মূল কারণ। এসব কণা শ্বাসনালি দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ এমনকি ফুসফুস ক্যানসার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।
সমাধান কোথায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজন—
-গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ইঞ্জিন রেট্রোফিটিং
-নির্মাণকাজে ধুলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
-শিল্পকারখানায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি
-কঠোরভাবে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ
-গাছপালা বৃদ্ধি ও সবুজায়ন
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, এখন সময় ঢাকার বায়ুকে শুধু সহনীয় নয়, বাসযোগ্য করে তোলার। নইলে অদূর ভবিষ্যতে এই শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।
