Sunday 15 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম চামড়ার হাটে হতাশ ব্যবসায়ীরা, ক্রেতাদের নানান অজুহাত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুন ২০২৫ ২৩:৪২ | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ০২:৩৪

দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম চামড়ার হাট যশোরের রাজার হাট

যশোর: দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম চামড়ার হাট যশোরের রাজার হাট। শনিবার (১৪ জুন) ঈদের পর দ্বিতীয় হাট এবং সপ্তাহের প্রধানতম হাট ছিল। তবে এদিন হাটে ২০ হাজারের অধিক চামড়া উঠলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি বিক্রেতারা। দাম না পেয়ে হতাশ প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা।

তবে ক্রেতাদের কেনা-বেচা থেমে ছিল না। বেশিরভাগ ক্রেতা দাম কমের কারণ নিয়ে কথা বলতে চাননি। যারা বলেছেন তাদের অজুহাতের অন্ত ছিল না। সরকার দাম বেঁধে দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল। বিক্রেতারা অনেকেই ক্রেতা সিন্ডিকেটের কারণে দামের পতন বলেছেন। আবার কেউ কেউ আশায় আছেন আগামীতে দাম বাড়বে।

বরাবরই কোরবানি ঈদের পরে চামড়া বিক্রেতা ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকেন যশোরের রাজার হাট চামড়ার হাটের দিকে। দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় এ হাটে সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার চামড়ার হাট বসে। তবে শনিবারের হাটটিই সব চেয়ে বড় হাট।

বিজ্ঞাপন

ঈদের পর মঙ্গলবার (১০ জুন) চামড়ার হাট তেমন জমেনি। চামড়া উঠেছিল কম। হাট কর্তৃপক্ষের দাবি সে দিন ৫-৬ হাজার চামড়া হাটে ওঠেছিল। অবশ্য দামও ভালো ছিল না। বিক্রেতারা অপেক্ষায় ছিলেন শনিবার বড় হাটের দিন কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন।

তবে এদিন বিগত হাট বা ঈদের আগের হাটের চেয়েও চামড়ার দাম কম ছিল। সরকার এক হাজার ১০০ টাকার বেশি চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও ব্যাপারিরা কিনছেন ২০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। কেনার পরও লবণ ও আসা-যাওয়া প্রক্রিয়ায় বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র-প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের আরও ২০০ টাকা খরচ হয় প্রতিটি চামড়ায়। আর ছাগলের চামড়া ১০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে।

হাটে এসে অন্য সময়ের চেয়ে দাম কম বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা। অনেকে এটাকে ক্রেতা-ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি মনে করলেও জোর দিয়ে বলতে সাহস পাননি। তাহলে চামড়া বিক্রি বা বিক্রির টাকা বাড়ি নিতে পারবেন না এমন আশঙ্কা তাদের রয়েছে।

সাতক্ষীরার বুলাক চন্দ্র দাস এনেছিলেন ২০টি গরুর চামড়া। ৫০০ টাকার বেশি দাম ওঠেনি বলে জানালেন। লবণসহ গড়ে প্রতি চামড়ায় তার ৮০০ টাকা খরচ রয়েছে।

বাঁকড়ার দুলাল চন্দ্র দাশ ৪টি গরুর চামড়া এনে ছিলেন। একহাজার ৮০০ টাকায় কিনে লবণসহ তার প্রায় ২ হাজার ২০০ টাকা খরচ হলেও হাটে ব্যাপরিরা দাম বলেছেন একহাজার ৭০০ টাকা। ঝিকরগাছার ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী ১৫টি ছাগলের চামড়া এনছিলেন হাটে। তিনি প্রতিটি ৪০ টাকা করে কিনলেও হাটে দাম উঠেছে প্রতিটি ১৫ টাকা হিসেবে।

খুলনা সিদ্দিকীয় দারুল মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক এসেছিলেন হাটে চামড়ার দর জানতে। তারা জানালেন তাদের মাদরাসায় ৬০০ চামড়া সংরক্ষণ করেছেন। প্রতিটি চামড়ায় তাদের ৮০০ এর অধিক টাকা খরচ হলেও বাজারে গড়ে ৬০০ টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না জেনেছেন। ওভাবে বিক্রি করলে তাদের দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হবে। ব্যবসায়ীরা তাদের বলেছেন অপেক্ষা করলে দাম বাড়তে পারে। তবে তারা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, সরকার দাম নির্ধারণ করেছেন কিন্তু কোথায় গেলে বা কারা এই দামে চামড়া কিনবেন সেটা বলেনি। রাজার হাট বাজার এক ধরনের ক্রেতা সিন্ডিকেটের কবলে রয়েছে বলে তারা ও আরও কয়েকজন বিক্রেতার অভিযোগ।

ক্রেতা ও হাট কর্তৃপক্ষের অজুহাতের অভাব নেই। স্থানীয় আড়তদার বাবু, ইজারাদার হাসানসহ বেশ কয়েকজন আড়তদার ও ক্রেতা জানান, সরকার দাম বেঁধে দিয়ে ক্ষতি করেছে। একটানা ব্যাংক বন্ধ রয়েছে তাই নগদ টাকার ব্যবস্থা নেই। দূরবর্তী ব্যাপারি আসছেন না।

তারা আরও জানান, বেচবেন কোথায় এটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তাছাড়া তাদের এই চামড়া কেনার পর সংরক্ষণে খরচ রয়েছে। লবণ ও শ্রমিকের মূল্য বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে বলা যায়, সরেজমিন শনিবার সকালে চামড়ার হাটে বেশ কয়েকজন ক্রেতা ও ব্যাপারিকে চামড়া কেনায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেলেও তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। দাম কেনো কম দিচ্ছেন বা সরকার নির্ধারিত দামে কেনো কিনছেন না এ প্রশ্নের জবাব দেননি।

তবে কয়েকজন সাধারণ বিক্রেতারা এবার আশা করেছিলেন, বর্তমান সরকারের আমলে চামড়া ক্রেতা সিন্ডিকেটের আওতা থেকে মুক্ত থাকবে রাজার হাটের চামড়ার হাট। সরকার যেহেতু দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ফলে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবেন। বাস্তবে তার উলটো চিত্র দেখে হতাশ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজর দিলে এবং সরকার নির্ধারিত দামে বেচা কেনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে হয়তো প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা এখনো পুঁজি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন।

সারাবাংলা/এইচআই

ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ চামড়া যশোর রাজার হাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর