Sunday 15 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম বন্দর
কনটেইনার জমেছে ৪৫ হাজার, জট কমতে আরও দু’দিন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২৫ ২০:২২

চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল আজহার টানা সরকারি ছুটিতে খালাস ঠিকমতো না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৪৫ হাজার কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে। এখন বন্দরের ভেতরে খালি আছে মাত্র ২০ শতাংশ জায়গা।

তবে ছুটি শেষে জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং খালাস আগের নিয়মে ফিরে যাচ্ছে। বন্দরকেন্দ্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরুর পর বন্দর থেকে আমদানি কনটেইনার ডেলিভারি এবং রফতানি কনটেইনার প্রবেশের হার বেড়েছে।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজারেরও বেশি আমদানি কনটেইনার বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে। এ গতি অব্যাহত থাকলে সর্বোচ্চ দু’দিনের মধ্যে কনটেইনার জট পরিস্থিতি আর থাকবে না। বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে) কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। তবে ৪০ হাজার টিইইউসের বেশি কনটেইনার ডেলিভারির জন্য বন্দরের ভেতরে অপেক্ষমাণ থাকলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে এবং দ্রুত জট পরিস্থিতি তৈরি হয়।

বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ছুটি শেষে খোলার প্রথমদিন রোববার (১৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানি-রফতানি পণ্যবোঝাই ও খালিসহ মোট কনটেইনার ছিল ৪৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে)। সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ২৪৩৬ টিইইউস কনটেইনার। জেটিতে ১০টি জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস চলছিল। জাহাজগুলোতে মোট ৪২০০ টিইইউস কনটেইনার আছে। এছাড়া জেটিতে প্রবেশের অপেক্ষায় বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অপেক্ষমাণ আছে আরও ১০টি জাহাজ, যাতে কনটেইনার আছে ১০ হাজার টিইইউস।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি ছুটির শেষদিন অর্থাৎ গতকাল (শনিবার) থেকেই বন্দরে কাজের গতি বেড়েছে। স্টেকহোল্ডাররা সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন, সবার কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আজ (রোববার) কর্মদিবস শুরুর প্রথম দিনেই পুরোদমে ডেলিভারি শুরু হয়েছে। আইসিডিগুলো থেকেও কনটেইনার আসছে। ডেলিভারি রেট বেড়েছে।’

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে গত ৫ জুন থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়, যা ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০দিন ছিল। এত দীর্ঘ ছুটির কারণে বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি এবং আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা করে আসছিলেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। এ আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে সম্ভাব্য অচলাবস্থা মোকাবিলায় ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে শুধুমাত্র ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু এরপর থেকে আগের মতোই ২৪ ঘণ্টা সচল আছে বন্দর।

তবে ছুটিতে কলকারখানা বন্ধ থাকায় এবং বেসরকারি ডিপোগুলোতে শ্রমিক সংকটের কারণে কনটেইনার ডেলিভারির হার ‘অস্বাভাবিক’ কমে গিয়েছিল। এতে কনটেইনার খালাসের জন্য নোঙ্গর করা জাহাজকে জেটিতে অতিরিক্ত একদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছিল।

বন্দর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সরকারি ছুটি শুরুর দিন গত ৫ জুন বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছিল ৪ হাজার ১২২ টিইইউস। এদিন জাহাজে রফতানি কনটেইনার তোলা হয়েছিল ৯ হাজার ৭২০ টিইইউস আর আমদানি কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো হয়েছিল ৫ হাজার ৪১১ টিইইউস।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের দিন ৬ জুন থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। এদিন মাত্র ৫২১ টিইইউস কনটেইনার ডেলিভারি হয়। ঈদের দিন ৭ জুন বিকেল ৪টা থেকে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হলেও বন্দর থেকে কোনো কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি। তবে কনটেইনার জাহাজ থেকে ডেলিভারি হয় ৩০৮ টিইইউস।

ঈদের পরদিন ৮ জুনও কোনো কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি। ৯ জুন ৪৩১ টিইইউস, ১০ জুন ১ হাজার ৩৮১ টিইইউস, ১১ জুন ১ হাজার ৭৮১ টিইইউস ডেলিভারি হয়।

ঈদের ছুটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাসের পরিমাণও কমে যায়। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন আমদানি কনটেইনার নামানো হয় ৫ হাজারের মতো। কিন্তু ৫ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫৪৪ টিইইউস এবং সর্বনিম্ন ২ হাজার ৩১১ ‍টিইইউস আমদানি কনটেইনার জাহাজ থেকে খালাস হয়।

টানা ১০ দিনের ঈদের ছুটির শেষ দিন শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে জমে থাকা কনটেইনারের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৪১৬ টিইইউস। এর পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি বাদে আরও দুই হাজার কনটেইনার জমা হয়। এ হিসেবে বন্দরের ধারণক্ষমতার ৮০ শতাংশ জায়গায় কনটেইনার জমে গেছে।

ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (রোববার) সারাদিন যে গতিতে ডেলিভারি হয়েছে, আগামীকাল (সোমবার) সকাল ৮টার মধ্যে আশা করি তিন হাজারের বেশি কনটেইনার ডেলিভারি হয়ে যাবে। ৪৪ হাজারের বেশি কনটেইনার জমলেও বন্দরের কাজে তেমন প্রভাব পড়েনি। এখন যেভাবে কাজের গতি বেড়েছে, এই জটটাও আশা করছি দু’য়েকদিনের মধ্যে আর থাকবে না।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর জট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর