Monday 16 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ
সময়াবদ্ধ ১৫ সংস্কার কার্যক্রমের ৩টি শেষ, চলমান ১২টি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ জুন ২০২৫ ২০:০৪ | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ২০:০৭

ঢাকা: সার্বিকভাবে আর্থিক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে আওতাধীন চারটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরামর্শে ১৫টি সংস্কার পরিকল্পনা/কার্যক্রম হাতে নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় দুটি নতুন আইন প্রণয়ন ও ৬টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের একাধিক নীতিমালা-বিধিমালা ও সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, বীমা ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি’র কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন এবং পুঁজিবাজার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম আপগ্রেডেশন করা হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গতবছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর এসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। গৃহীত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ১২টি স্বল্প মেয়াদি ও ৩টি মধ্য মেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম রয়েছে এবং গত মে পর্যন্ত তিনটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সমাপ্ত তিনটি সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ‘ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ ও গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি এবং মাইক্রো ফাইন্যান্স সার্ভিসসমূহ ডিজিটাইজেশন করা। অবশিষ্ট ১২টির কাজ চলমান রয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রণীতব্য আরেকটি নতুন আইন হচ্ছে- ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ (বাস্তবায়নকাল: অক্টোবর ২০২৪-জুন ২০২৬)। ইতোমধ্যে আইনটির প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রাথমিক খসড়ার ওপর প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশোধিত খসড়া এখনো পাওয়া যায়নি।

এছাড়া ৬টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন; বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন; বীমা আইন ২০১০, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০; মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন; প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ এবং গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন।

গত মাসের ( ২৫ মে ২০২৫) শেষ দিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এর সময়াবদ্ধ সংস্কার পরিকল্পনা/কার্যক্রমের ১ম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে চলমান সংস্কার কার্যক্রমগুলোর সর্বশেষ অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। যা নিম্নরূপ-

‘ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন’ (বাস্তবায়নকাল: ডিসেম্বর ২০২৪-মে ২০২৫): ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট এর কিছু কিছু ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনটির সংস্কার কাজ গত ডিসেম্বরে শুরু করা হয়েছে এবং গত মাসে (মে ২০২৫) এটি সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে এটির কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন’ সংশোধন (বাস্তবায়নকাল: অক্টোবর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৫): ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ এবং ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩’-কে একীভূত করে আইনটির একটি খসড়া সংশোধনী তৈরি করা হয়েছে। খসড়া আইনের ওপর মতামত প্রদানে এটি বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্স বরাবর পাঠানো হয়েছে। টাস্কফোর্স কর্তৃক সংশোধনী প্রস্তাব দ্রুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাতে বিএসইসি-কে লিখিত তাগিদ দেওয়ার জন্য বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

‘বীমা আইন ২০১০’ ও ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০’ সংশোধন (বাস্তবায়নকাল: ডিসেম্বর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৫): ‘বীমা আইন ২০১০’ কর্তৃপক্ষ পর্যায়ে সংশোধন চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশোধনীটির ওপর স্টেক হোল্ডারদের মতামত গ্রহণে গত ৩১ মে’র মধ্যে এটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের কথা থাকলেও এটি এখনো ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০’ এর সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

‘মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬’ ও ‘মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০’ সংশোধন (বাস্তবায়নকাল: অক্টোবর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৬): মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি’র বোর্ড সভায় আইনটি উপস্থাপনের লক্ষ্যে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বোর্ডের অনুমোদনের পর পুনরায় এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানোর কথা রয়েছে।
অন্যদিকে বিধিমালার কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি’র পরিচালনা বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্টেক হোল্ডারদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এর চূড়ান্ত সংশোধনী প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এখনো পাঠায় নি মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি।

‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০’ যুগোপযোগীকরণ (বাস্তবায়নকাল: ডিসেম্বর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৬): এ আইনটি যুগোপযোগীকরণে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। প্রস্তাব পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন: নীতিমালা সংশোধনে সর্বশেষ গত ২৭ মে এ-সংক্রান্ত গঠিত কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নীতিমালাটি সংশোধন-পূর্বক জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন: নীতিমালা চূড়ান্তকরণে গঠিত কমিটির সর্বশেষ বৈঠক গত ১ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব): ইতোমধ্যে রূপালী, জনতা ও বেসিক সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন করে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ মে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এর সাংগঠনিক কাঠামো ২০২৫ অনুমোদনের একটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পুঁজিবাজার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম আপগ্রেডেশন (বাস্তবায়নকাল: অক্টোবর ২০২৪-জুন ২০২৫): কার্যক্রমের আওতায় প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ক্রয়েএবং পুরাতন সিস্টেম থেকে নতুন সিস্টেমে ডাটা ট্রান্সফার সম্পন্ন হয়েছে। সফটওয়্যার সংক্রান্ত নথি বিএসইসি’র কমিশন সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বীমা কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন (জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০২৫): প্রকল্পের আওতায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-তে সুপটেক ও ইআরপি সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, এর মাধ্যমে সকল বীমা কোম্পানির যাবতীয় তথ্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া আইডিআরএ কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ও হিসাব রক্ষণসহ যাবতীয় কাজ অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।

মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন (বাস্তবায়নকাল: অক্টোবর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৬) : ইতোমধ্যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি’র মগবাজারস্থ পুরাতন কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ ও অন্যান্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সারাবাংলা/আরএস

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সংস্কার কার্যক্রম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর