Monday 16 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম বন্দর
সব অস্থিরতা সামলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ জুন ২০২৫ ২১:১৯

চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং এর পরবর্তী সব অস্থিরতাকে সামাল দিয়ে চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। চলতি অর্থবছরের আরও ১৫ দিন বাকি থাকতেই কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বন্দর গত অর্থবছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি ১৫ জুন পর্যন্ত আমদানি ও রফতানি মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৯ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে)। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল। প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ হিসেবে গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের জুলাই-আগস্টে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার প্রায় মাসব্যাপী গণআন্দোলন, ইন্টারনেট শাটডাউন, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতনের প্রভাব পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে। প্রায় মাসখানেক বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার শেষপ্রান্তে ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে অলিখিত নিষেধাজ্ঞার কারণেও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ধস নেমেছিল।

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে বন্দরে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এর মধ্যেও দেশের বিভিন্ন জেলায় আকস্মিক বন্যা, দফায় দফায় পণ্য পরিবহণকারী যানবাহন চালক-শ্রমিকদের ধর্মঘট নিয়ে অস্থির পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে বন্দরকে। সর্বশেষ কাস্টমসে কলমবিরতি এবং দুই ঈদের টানা দীর্ঘ ছুটিরও প্রভাব পড়ে বন্দরে। এর পরও ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের শেষভাগে এসে দেখা যাচ্ছে, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে চট্টগ্রাম বন্দর।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ায় আমদানি-রফতানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। সব অ্যাঙ্গেল থেকে সব পক্ষের সহযোগিতার কারণে এবং আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছি।’

বন্দর কর্মকর্তাদের মতে, নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হওয়ায় কনটেইনার ডেলিভারি দ্রুততর হয়েছে। এ ছাড়া, বন্দরের অটোমেশান সার্ভিস সুবিধা, ই-গেট পাস চালু, কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেম আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নেরও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাদের প্রত্যাশা, চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ বাকি ১৫ দিনে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ মাইলফলক স্পর্শ করবে।

উল্লেখ্য, দেশে আমদানি-রফতানিকেন্দ্রিক সমুদ্র বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনার ও পণ্য পরিবহণের ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। লয়’ড লিস্ট অনুযায়ী বিশ্বের ১০০টি ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭তম। মূলত কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করেই এই তালিকা করা হয়।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। তবে সেই অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে হ্যান্ডলিং কম হয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ১১ শতাংশে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৯ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৮ লাখ ৯ হাজার ৩৫৪ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

অস্থিরতা কনটেইনার হ্যান্ডলিং চট্টগ্রাম বন্দর রেকর্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর