সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই জলদস্যুকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার (১৬ জুন) রাতে উপজেলার উপকূলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এর আগে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগীসহ তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
আটকরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত ৫-৭ জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে পৌঁছায়। এ সময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য এসব ব্যক্তি মাইক্রোবাস বা ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলের সন্ধান করছিল। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে নাম-পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে আটকের পর পুলিশকে খবর দেয়।
পরে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের ওপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেওয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন।
আটক অপর জলদস্যু দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। তবে তার কাছে মোবাইলে পাওয়ার ব্যাংকসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে, শাহাজান ও আতিয়ারসহ একাধিক গ্রামবাসী জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর ও তার ছেলে আব্দুর রহিম দিদারুলসহ মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার কয়েকজনকে নিয়ে জোনাব নামে সুন্দরবনে দস্যুতা করে। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মুন্সিগঞ্জের এক ব্যক্তির নৌকার জেলে হিসেবে দিদারুল সুন্দরবনে প্রবেশ করে বলেও তাদের দাবি।
এসব ব্যক্তি আরও জানান, প্রায় প্রতিটি জেলে নৌকা একাধিকবার জলদস্যুদের কবলে পড়লেও অজ্ঞাত কারণে উক্ত পরিবহন ব্যবসায়ীর কোনো নৌকা থেকে জেলে উঠিয়ে নেওয়ার ঘটনা কখনো শোনা যায়নি।
এদিকে, অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককশিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।