Saturday 12 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কালো টাকা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় সরকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ জুন ২০২৫ ১৯:৫৫ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ২০:২২

ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়িয়ে কিছু কাটছাঁট করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হলেও কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা কিংবা না-রাখা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গত বছর ২৯ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সুযোগ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ২ সেপ্টেম্বর এনবিআর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে সে সময় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেস ও ভূমি আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত থাকলে তা নির্ধারিত হারে আয়কর দিয়ে বৈধ করার বিধানটি বহাল রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়িয়ে কিছু কাটছাঁট করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে তিন থেকে পাঁচ গুণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অর্থ বিলে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে নির্ধারিত এলাকা ভেদে ফ্ল্যাট বা ভবন কেনা এবং নির্মাণে কালোটাকা সাদা করতে হলে প্রতি বর্গফুটে নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হবে। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট বা ভবনের ক্ষেত্রে কর হবে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা। একই এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের কম আয়তনের ক্ষেত্রে কর নির্ধারিত হয়েছে ১৮০০ টাকা।

ধানমন্ডি, উত্তরা, মহাখালী, লালমাটিয়া, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কাওরান বাজারসহ অন্যান্য অভিজাত এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট বা ভবনের ক্ষেত্রে কর হবে ১৮০০ টাকা এবং অনধিক আয়তনের ক্ষেত্রে ১৫০০ টাকা।

অপরদিকে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে বড় ফ্ল্যাটের (১৫০০ বর্গফুটের বেশি) ক্ষেত্রে কর প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটে (১৫০০ বর্গফুটের কম) কর ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা সদরের পৌর এলাকায় বড় ফ্ল্যাটের জন্য কর প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটের জন্য ২৫০ টাকা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বড় ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে কর ১৫০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা। আর শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা নয়, ভবন নির্মাণেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। এলাকা ভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত কর দিয়ে এই সুবিধা নেওয়া যাবে।

তবে এক্ষেত্রে দুটি শর্ত উল্লেখযোগ্য। প্রথমত: অর্থটি যদি অপরাধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়, তবে তা বৈধ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত: অর্থের উৎস বৈধ না হলে, আইনের এই ধারায় সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে এ ধরনের সুযোগ থাকায় বিভিন্ন মহল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে বলেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত কর ব্যবস্থায় সরকার ব্যক্তি পর্যায়ে নির্ধারিত বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে ভবন, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ রেখেছে, যদিও করের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। অতীতে এ ধরনের বিধান দেওয়া সত্ত্বেও যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়নি। যদি কোনো সরকার অবৈধ আয়কে বৈধতা দিতে চায়, তবে তা কঠোরভাবে এককালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী।

সংস্থাটি বলেছে, ‘যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্র সংস্কার—বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে রীতিমতো উপেক্ষা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে, দুর্নীতিকে উৎসাহ দিয়ে রিয়েল এস্টেট লবির ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। করহার যা-ই হোক না কেন, এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এসব সমালোচনার জবাবে বাজেটত্তোর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘সবাই যদি এই বিধান না চায়, তবে সরকারও এ বিষয়টি বিবেচনা করবে।’

জানা যায়, এছাড়া কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে বিরোধী মত রয়েছে সরকারের অভ্যন্তরেও। সরকারের একটি প্রভাবশালী মহল চাইছে, আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা বিধান পুরোপুরি তুলে দেয়া হোক। কিন্তু এখানে বাধ সেধেছে একটি বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং এতে মৌন সমর্থন রয়েছে এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার। এর ফলে দোদল্যমান অবস্থানে রয়েছে সরকার।

এদিকে এ পরিস্থিতিতে বাজেটে আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘রিহ্যাব’। সোমবার (১৬ জুন) বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংগঠনের নেতারা এ অনুরোধ জানান। এ সময় আবাসন খাতের বর্তমান মন্দাবস্থার চিত্র তুলে ধরেন তারা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, রিহ্যাব এর অনুরোধের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস প্রদান করা হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- বলে অর্থ উপদেষ্টা তাদের জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরএস

অর্থ উপদেষ্টা আবাসন-খাত কালো টাকা বাজেট রিহ্যাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর