ঢাকা: যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা থেকে ৫ আগস্ট হয়েছিল, সেই প্রত্যাশা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি- বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, যে প্রত্যাশা থেকে ৫ আগস্ট হয়েছিল এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে প্রয়োজন সামনে এসেছিল, বাজেটে তা প্রতিফলিত হয়নি, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যে দাবি ছিল- তা প্রতিফলিত হয়নি।
বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম’ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ অবহেলিতরা কী পেয়েছে’ শীর্ষক এক সংলাপে ড. দেবপ্রিয় এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বাজেটে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এর বাস্তবায়ন দেখতে পাইনি। এটি হতাশার বাজেটে পরিণত হয়েছে। এ সরকার সাধারণ সরকার নয়, কিন্তু বাজেটে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা গতানুগতিক।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সরকারের বৃহত্তর সংস্কার এজেন্ডা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে। মূল কাঠামোগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলিকে খুব একটা শক্তিশালী করা হয়নি। কিছু অংশীদারদের পরামর্শ সত্ত্বেও বাজেট প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির অভাব রয়েছে। বাজেট প্রণয়নে রাজনৈতিক পক্ষগুলিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ‘তথ্য স্বচ্ছতা এখনও দুর্বল’- এমন মন্তব্য করে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। বাজেটে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর সাময়িক হিসাব উপেক্ষা করা হয়েছে। এর পরিবর্তে চলতি অর্থবছরের জন্য অতি-আনুমানিক লক্ষ্যমাত্রার উপর নির্ভর করে মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৪ শতাংশ অর্জন করতে হলে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতিতে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। আর ৫ শতাংশ অর্জন করতে হলে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার এক বছরের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এটি অর্জন করতে হলে উচ্চ স্তরের নীতি এবং সুদের হার সহ একটি রক্ষণশীল মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। কিন্তু এর ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
সংলাপে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাকে সংকুচিত করা হয়েছে। এর ফলে প্রস্তাবিত বাজেট একদিক সংশ্লিষ্ট বছরের জন্য বাজেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, পাশাপাশি আগামী বছরের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, বয়স্ক ভাতা ৬০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০০ টাকা হয়েছে। এতে বাজেটে প্রকৃত অর্থে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কমেছে।
হিসাববিদ জিয়া হাসান বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি কমে গেছে, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে এটা হয়েছে। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে মূল্যস্ফীতির এ চিত্র প্রতিফলিত হয়নি।