ঢাকা: ২৭ মে, সকাল সাড়ে ৯টা। মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর-১১ নম্বরের সি-ব্লকের বাসা থেকে একটি কালো ব্যাগে ২১ লাখ টাকা ও বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। ৯টা ৪০ মিনিটে তারা শেরেবাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝের গলির মাথায় পৌঁছে। এ সময় ওঁৎ পেতে থাকা ডাকাতরা তাদের পথরোধ করে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এমনকি তারা ফাঁকাগুলি করে ও জাহিদুলকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ওইসব ডাকাতদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
গ্রেফতার ডাকাতরা হলেন- মো. জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), সোহাগ হাসান (৩৪), মো. জলিল মোল্লা (৫২) এবং পলাশ আহমেদ (২৬)।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টায় মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী তাদের মিরপুর-১১ নম্বরের সি-ব্লকের বাসা হতে একটি কালো ব্যাগে ব্যবসার ২১ লাখ টাকা ও বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের (মিরপুর ১০ নম্বর) উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা করেন। তারা সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে শেরে বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝের গলির মাথায় পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে চারটি মোটরসাইকেলে ওঁৎ পেতে থাকা অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন মাস্ক পরিহিত ডাকাত তাদের পথরোধ করে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের একজন জাহিদুল হক চৌধুরীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার হাতে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। জাহিদুল হক ও তার শ্যালক রাসেল ডাকাত দলকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে মুখোশধারী এক ডাকাত পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি করে ভীতি সৃষ্টি করে এবং অপর একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরের বাম পাশে আঘাত করে। চাপাতির আঘাতে জাহিদুল গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে তারা টাকার ব্যাগটি নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত মিরপুর-১ নম্বরের দিকে পালিয়ে যায়।’
ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ঘটনাটি একজন পথচারী তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় জাহিদুল হক চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির টিম ঘটনায় ব্যবহৃত একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মাইক্রোবাসটির চালক জাফরকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর মাইক্রোবাসটি ওই ডাকাতির কাজে ব্যবহারের কথা স্বীকার করে। পরে ডাকাতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ডাকাতদলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ অপরাপর সদস্য মোস্তাফিজ, পলাশ, দিপু ও সোহাগকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ তিন হাজার টাকা ও ১০৬ টি বিভিন্ন মানের বৈদেশিক মুদ্রা, দুই লাখ ১২ হাজার টাকা মানের জাল টাকা এবং ঘটনার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের সবাই পেশাদার ডাকাত এবং তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, খুন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।