ঢাকা: বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে শ্রীলংকা। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) শ্রীলংকায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সে দেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ডিসিসিআই’র পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে শ্রীলংকায় সফররত বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শ্রীলংকার উপ-পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপ-অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমার সঙ্গে নিজ নিজ দফতরে সাক্ষাৎ করে।
সাক্ষাৎকালে শ্রীলংকার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র বলেন, ‘দুদেশের বেসরকারিখাতের সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে আগামীতে শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের বিষয়ে তিনি জানান, শ্রীলংকা ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে এফটিএ সই করেছে। বাংলাদেশে সঙ্গে এফটিএ-এর সম্ভাব্য সুফল ও ঝুঁকি নিয়ে বর্তমানে বিশ্লেষণ চলছে। তিনি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তার দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং এলক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ধারা পরিবর্তন হচ্ছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতনিকারক, তবে প্রযুক্তি পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং উদ্ভাবনের দিক থেকে শ্রীলংকা বেশ এগিয়ে রয়েছে।’ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে দুদেশের বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ উভয়দেশের মধ্যে একটি এফটিএ সই হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগনের মধ্যকার সংযোগ আরও সুদৃঢ় হবে।’
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলংকার ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে অত্যন্ত আগ্রহী এবং শ্রীলংকার উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও শ্রীলংঙ্কার অর্থনীতি প্রায় একই ধাঁচের, যেখানে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বাস্তবিক অর্থে ততটা কার্যকর হবে না, এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
ডিসিসিআই’র ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথক এক বৈঠকে শ্রীলংকার উপ-অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করার অবারিত সুযোগ রয়েছে, বিশেষকরে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবা, ওষুধ, চা, জ্বালানি, আর্থিক সেবা এবং পর্যটন খাত যৌথ বিনিয়োগের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাময়।’
তিনি জানান, শ্রীলংকা ইতোমধ্যেই একটি উচ্চাভিলাষী ডিজিটাল রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে এবং এই পরিকল্পনার অধীনে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তর এবং প্রতিটি সেবা স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘শ্রীলংকায় অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ এগিয়ে আসতে পারেন।’ এ ছাড়াও, তিনি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের শ্রীলংকার ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানান, যাতে দেশটির স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।