Friday 20 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারী অধিকারের প্রশ্নে জোরালো কণ্ঠস্বর হয়ে রয়েছেন সুফিয়া কামাল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ জুন ২০২৫ ২১:১১ | আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ০০:০৭

ঢাকা: বিংশ শতাব্দীর অধিকংশ সময় জুড়ে নারী মুক্তি, মানবমুক্তির লক্ষ্যে যার পদচারণা সবসময় মুখর হয়ে থাকত তিনি-ই সুফিয়া কামাল। জীবনব্যাপী তিনি বাধার দেয়াল অতিক্রম করেছেন। সমাজ প্রগতির আন্দোলনকে অগ্রসর করে নিয়ে গেছেন তিনি। নারী অধিকারের প্রশ্নে জোরালো কণ্ঠস্বর হয়ে রয়েছেন তিনি। সুফিয়া কামালের সাহস কে সঙ্গী করে সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা যে পথ চলেছি, সেই পথচলা অব্যাহত থাকবে।

শুক্রবার (২০ জুন) রাজধানী বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সুফিয়া কামাল স্মারকবক্তৃতা, সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নারীমুক্তি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কবি সুফিয়া কামালের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।

বিজ্ঞাপন

স্মারকবক্তৃতা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, কবি সুফিয়া কামাল কেবল কবি হিসেবে নয়, মাঠে-প্রান্তরে দৌড়ে তিনি নারী অধিকারের প্রশ্নে সুউচ্চ স্বর হয়ে রয়েছেন। তিনি বিজয়ের ক্ষণে যেমন ঋজু , লড়াইয়েও তেমনি সমান শক্তি নিয়ে দাড়ান আমাদের অলক্ষ্যে থেকেও। সাম্প্রতিক সময়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নারীর অগ্রগতি ও অবস্থান সম্পর্কে আলোচনাকালে তিনি বলেন, ২০২৫-এ এসেও যেন নারীর আগের অর্জনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, ডিজিটাল বিপ্লবে নারীর অভিগম্যতা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি, সহিংসতার অবসান ঘটানো, সিদ্ধান্তগ্রহণে পরিপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত এবং পরিবেশগত ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কন্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখার রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ও সচেতন থাকতে হবে; রাজনীতিতে নারী ও প্রান্তিকের উপস্থিতি ও প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। সকল লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র শিক্ষাঙ্গন, রাস্তা ও জনপরিসর তৈরি করায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মজুরি, পদমর্যাদা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে। তিনি পারিবারিক সম্পদ-সম্পত্তি ও উত্তরাধিকারে সমান অধিকার নিশ্চিতসহ নারীর বিরুদ্ধে সকল ধরণের সহিংসতাকারীর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তির বক্তব্যে বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী বলেন, আমাকে যে সম্মাননা দেওয়া হলো তা আমার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সুফিয়া খালাম্মার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম। তার ইচ্ছাগুলিকে নিয়ে কি করতে পারি তা নিয়ে ভাবতাম। শুধু ছবি একেই গেলেই হতো তবে দেশের কথা, মানুষের কথা ভেবেই ‘টোকাই’তৈরি করেছিলাম।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন,সুফিয়া কামালের সাহস কে সঙ্গী করে সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা পথ চলেছি সেই পথচলা অব্যাহত থাকবে। কবির জীবনের পরিক্রমা পর্যালোচনায় দেখা যায় বৈশ্বিক বাস্তবতায় নারী আন্দোলনের জন্য সকলকে অর্ন্তভূক্ত করার যে কথা বলা হচ্ছে সেটি তিনি বহুবছর আগেই বলে গেছেন। আমরা যে বৃত্তে আছি, সেই বৃত্ত ভেঙে নতুন করে নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ার কাজ করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মুল বাণী সমতা, সাম্য, মর্যাদাকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে, সেইসঙ্গে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে নারীর পাশাপাশাশি পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, বিংশ শতাব্দীর অধিকংশ সময় জুড়ে নারী মুক্তি, মানবমুক্তির লক্ষ্যে যার পদচারণা সবসময় মুখর হয়ে থাকত তিনিই সুফিয়া কামাল। তার সেই সংগ্রামের মশাল গত ৫৫ বছর ধরে সংগঠন বহন করে চলেছে। জীবনব্যাপী তিনি বাধার দেয়াল অতিক্রম পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায়। তিনি সমাজ প্রগতির আন্দোলনকে অগ্রসর করে নিয়ে গেছেন। সমাজ সচেতন মানবতাবাদী লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, একইসঙ্গে সকল ধরণের বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, প্রতিবাদে সোচ্চার থেকেছেন।

এবারের স্মারকবক্তৃতার বিষয় ছিলো‘সুফিয়া কামাল: বাধা পেরিয়ে নারীর অভিযাত্রা’। স্মারকবক্তৃতা প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা। সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রদান করা হয় বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবীকে। অনুষ্ঠানের শুরুতে কবি সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আমন্ত্রিত অতিথি, সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠনের সদস্যরা। বৃন্দআবৃত্তি করেন কন্ঠশীলনের শিল্পীরা। সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী এ এম এম মহীউজ্জামান চৌধুরী (ময়না) এবং বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন কণ্ঠশীলনের আবৃত্তি শিল্পীবৃন্দ। স্মারকবক্তৃতা শেষে সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তির পরিচিতি পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এসআর

জোরালো কণ্ঠস্বর নারী অধিকার সুফিয়া কামাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর