Friday 20 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেরোবি শিক্ষক মাহামুদুল হক গ্রেফতার, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ জুন ২০২৫ ২৩:৫৯

মাহামুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন।

রংপুর: মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হককে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তার স্বজন, শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা। এই দাবিতে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে, এই মিথ্যা মামলার পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (২০ জুন) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মাহামুদুল হকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সাংবাদিকরাও অংশ নেন। মানববন্ধন চলাকালীন পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘আমাদের বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক স্যারকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে তার নিজ বাসভবন থেকে একটি হয়রানি ও প্রহসনমূলক মিথ্যা হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে সসম্মানে ও নিঃশর্তে মুক্তি, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই মিথ্যা মামলার পরিকল্পনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং গঠনের পরবর্তী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে এই তদন্তের রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।’

তিনি আরও জানান, নিঃশর্ত মুক্তি না পাওয়া এবং তদন্ত প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন এক ব্যক্তি অথচ ১০ মাস পর করা হলো হত্যা মামলা। বাদী জানেন না কোন কাগজে সই করেছেন তিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ৫৪ জনকে আসামি করা হয়েছে এই মেটিকুলাস হত্যা মামলায়। ৫৪তম আসামি করা হয়েছে সহযোগী অধ্যাপক মাহামুদুল হককে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদবী গোপন করা হয়েছে জনাব মাহামুদুল হকের ঠিকানায়। ৫৪ জনের মধ্যে কেবলমাত্র মাহামুদুল হককে গ্রেফতার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা কাদের চাহিদা পূরণ করেছে? এই মেটিকুলাস ডিজাইন যে বা যারা করেছে তাদেরকে বের করে আইনের আশ্রয়ে নিয়ে আসার আহ্বান করছি।’

মাহামুদুল হকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানববন্ধন

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাহীন আলম বলেন, ‘মাহমুদুল হক জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ফেসবুকে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার অবস্থান নিয়েছিলেন। আন্দোলনের পক্ষের শক্তিকে মিথ্যা, ভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে, এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।’

মাহামুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন অভিযোগ করেন, যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি (ছমেস উদ্দিন) হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মামলার বাদীর কাছ থেকে হাজিরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাদা কাগজে সই নিয়েছেন। পরে ইচ্ছামতো আসামি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে মূলত পরিকল্পনা করে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হয়েছে। এর পেছনে আছেন দুজন—একজন চিকিৎসক, অন্যজন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। এর আগেও ওই দুজন আমার স্বামীকে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন।’

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে মাহামুদুল হককে নিজ বাসা নগরীর ধাপ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া থেকে মহানগর হাজিরহাট থানার পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে তোলে। আদালত তার জামিন মঞ্জুর না করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মাহামুদুল হককে গ্রেফতারের খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা হাজিরহাট থানায় গিয়ে তাকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চান ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সারাবাংলা/এইচআই

বেরোবি বেরোবি শিক্ষক গ্রেফতার মাহামুদুল হক গ্রেফতার মিথ্যা মামলা রংপুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর