খুলনা: সারাদেশের মতো খুলনায় ফের চোখ রাঙাচ্ছে কোভিড নাইনটিন বা করোনাভাইরাস। কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টে গত কয়েকদিনে খুলনায় বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন করে করোনা আক্রান্তের খবরে আতঙ্কে নগরবাসী। কিন্তু করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় কতটুকু প্রস্তুত খুলনা। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার প্রস্তুতিই বা কতটুকু- সেটা জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা মেডিক্যাল হাসপাতালে ২০২৩ সালের পর খুলনায় করোনার তেমন প্রভাব ছিল না। যার কারণে ২০২৪ সালে ডিসেম্বরে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দেড় বছর পর গত সোমবার (১৬ জুন) নতুন করে খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নুসরাত জাহান সুমাইয়া (১৮) এক নারী করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে খুমেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ইয়োলো জোনে ভর্তি হলে বিষয়টি প্রথম জানাজানি হয়। সে নগরীর নিরালা প্রান্তিকা এলাকার বাসিন্দা মিরাজ মোল্লার স্ত্রী। ওইদিন সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যান্টিজেন র্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে তানিয়া (৪২) নামে এক গৃহবধুর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। সে নগরীর বয়রা বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. আসাদুজ্জামানে স্ত্রী। আর বুধবার (১৮ জুন) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় করুনা বেগম (৬০) নামের এক বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে করোনা ইউনিট ঢেলে সাজানো হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৪০টি বেড। এর মধ্যে আইসিইউ বেড রয়েছে ১০টি। ২০২০ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৯৩ জনকে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইয়োলো জোনে ভর্তি ছিল ৭ হাজার ১২১ জন এবং রেড জোনে ছিল ২ হাজার ৯৭২ জন। এ সময়ে ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা রোগী মারা যায় ৭৪২ জন। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা রোগী মারা যায় ৬৯৬ জন।
জানা গেছে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টটির উপসর্গ কিছুটা পরিবর্তিত। আগের মতো কাশি ও হঠাৎ জ্বর প্রধান নয়; বরং এখন দেখা যাচ্ছে গলাব্যথা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা এবং হালকা কাশি। কেউ কেউ অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া, আবার কারও ক্ষেত্রে শুধু সামান্য ঠান্ডাজনিত অনুভূতি, বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্টে সমস্যা। শিশুদের মধ্যে জ্বর-খুসখুসে কাশি ও পাতলা পায়খানা লক্ষণীয়। একটি উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে-অনেকেই উপসর্গহীন থেকেও ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।
নগরীর নিরালা এলাকার বাসিন্দা তৈয়বুর রহমান সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেশে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে মহামারি করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট। এমন খবর সবার জানা থাকলেও খুলনায় কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। কেউ যেন পাত্তাই দিচ্ছে না।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে করোনার কিট সংকট রয়েছে। কিট চাহিদা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ মোহাসীন আলী ফরাজি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা রোগীদের জন্য এরই মধ্যে ৪০টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে।’