ঢাকা: রাজধানীর গুলশান-বাড্ডার নতুন বাজার এলাকায় বাড্ডা-রামপুরা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনরত বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা অবশেষে ৫ দফা দাবি ঘোষণার পর সড়ক থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে প্রায় সারাদিন ধরে বন্ধ থাকা মহাসড়কে ধীরে ধীরে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
শনিবার (২১ জুন) দুপুর ১২টার দিকে ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবিতে বাড্ডা-রামপুরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়, এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সড়কে শুয়ে পড়েন। এর ফলে পুরো মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকা পড়ে থাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ হালকা লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পুলিশের এই পদক্ষেপের পর শিক্ষার্থীরা একদিকের সড়ক বন্ধ করে তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে এবং এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ডিসি মিডিয়া জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশ কোনো প্রকার বলপ্রয়োগ করেনি।
আরও পড়ুন
- ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বলপ্রয়োগ করেনি পুলিশ: ডিএমপি
- সড়ক অবরোধ করে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
অবশেষে, বিকেল ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের ৫ দফা দাবি ঘোষণা করলে ধীরে ধীরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবিগুলো হলো—
- ইউআইইউ কর্তৃক অন্যায়ভাবে সব বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত বহিষ্কার প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থী শোকজ পেয়েছেন ও বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা বিগত ২ মাস যাবত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এ ছাড়া, নানা মানসিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অন্যায় সিদ্ধান্তের জন্য। সেজন্য বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ বিনা শর্তে তুলে নিতে হবে এবং যেসব একাডেমিক ও অন্যান্য ক্ষতি হয়েছে সেসবের ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।
- বহিষ্কারের সঙ্গে জড়িত সব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা। যেসব কর্তৃপক্ষ সদস্য, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, শিক্ষক, স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা অভিযোগের কারণে ও কূট-কৌশলে শিক্ষার্থীরা অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
- ইউআইউতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-অসুবিধা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রিফর্ম দাবিগুলো বাস্তবায়ন। ইউআইইউ রিফর্মের যেসব দাবি পূরণ করা হয়নি সেসব দাবি পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি যেসব কর্তৃপক্ষ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে তাদের বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবসাকরণ ও মান অবনতির জন্য দায়ী।
- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউআইইউর সাম্প্রতিক অস্থিরতাসহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যা সমাধানে উদাসীন। শত ছুটাছুটি করেও ইউআইইউর ক্রিটিক্যাল সমস্যার সমাধান তারা করতে পারেননি এবং তারা নিজেরাই তাদের অপারগতা স্বীকার করেছেন। তারা মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যাগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এজন্য কেবল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয় তদারকির জন্য একটি আলাদা ও স্বতন্ত্র মঞ্জুরি কমিশন গঠন করতে হবে।
- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করতে হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের আরোপিত ১৫ শতাংশ কর মওকুফ করতে হবে এবং সরকারি তদারকিতে এই বাঁচানো অর্থ শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।