Sunday 22 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বধ্যভূমি প্রকল্প
নীলফামারীতে ৬ বছরেও কাজ শুরু হয়নি, স্মৃতিচিহ্ন বিলুপ্তির পথে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ জুন ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ২৩:০৯

নীলফামারী: ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ। ইতিমধ্যে ছয় বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও নীলফামারী জেলার চারটি বধ্যভূমির কাজ এখনও শুরু হয়নি। বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতায় এখন স্মৃতিচিহ্ন বিলুপ্তির পথে।

জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ৯টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করা হলেও, মাত্র ছয়টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো হলো- জলঢাকা উপজেলার গোলনা কালিগঞ্জ, ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ভোগডাবুড়ি ও মির্জাগঞ্জ খানপাড়া, সদর উপজেলার খালিশাপাড়া (চৌধুরীপাড়া), এবং সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ও গোলাহাট বধ্যভূমি। তবে, ডিমলা, ডোমার, কিশোরগঞ্জ ও সদর উপজেলার চারটি বধ্যভূমিতে এখনও কোনো কাজ শুরু হয়নি।

বিজ্ঞাপন

উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে কুমলাই নদীর তীরে অবস্থিত এই বধ্যভূমিতে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা শায়িত আছেন। ২০২০ সালে প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালালেও এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে বধ্যভূমিটির উত্তর পাশে নদী এবং দক্ষিণ পাশে একটি হোটেল গড়ে উঠেছে, যার ফলে বধ্যভূমিটি এখন মলমূত্র ত্যাগের স্থানে পরিণত হয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, নিচু জমি হওয়ায় মাটি ভরাট ও রিটেইনিং ওয়ালের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালককে জানানো হলেও, জমি সংক্রান্ত কোনো জটিলতার কথা উল্লেখ করা হয়নি।

চান্দিনাপাড়া গ্রামের বধ্যভূমিটি এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন। সেখানে কৃষিকাজ চলায় বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষের দিকে এবং বরাদ্দ পেলেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

এই স্থানে বর্তমানে এক টেলিকম ব্যবসায়ীর বাড়ি রয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, এখানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সংরক্ষণ বা চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ দেখা যায়নি।

এই বধ্যভূমি এখন লুৎফর রহমান নামে এক ব্যক্তির দখলে, যিনি সেখানে বাঁশঝাড় লাগিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এটি তার পৈতৃক সম্পত্তি এবং এখানে কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। তবে স্থানীয় আজিজুল ইসলাম জানান, তার বাবাকে এই বাঁশঝাড়েই নির্যাতন করা হয়েছিল এবং এখানেই শহিদ করা।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাকিউজ্জামান জানান, ডিমলার শুটিবাড়ী বধ্যভূমি নদী শ্রেণির নিচু জমি হওয়ায় অতিরিক্ত বাজেট প্রয়োজন। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ, ডোমার ও সদর উপজেলার বধ্যভূমিগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। বরাদ্দ পেলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘসূত্রতা ও অবহেলার কারণে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। তারা দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে একনেক সভায় “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন” শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ২৮০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৪৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি বধ্যভূমির জন্য ৮০ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয় এবং ৪০ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ ছিল।

সারাবাংলা/এসআর

নীলফামারী বধ্যভূমি প্রকল্প বিলুপ্তির পথে স্মৃতিচিহ্ন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর