Saturday 12 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষাবোর্ডের ফটকে তালা ঝুলিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ জুন ২০২৫ ১৭:৩৭ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ২০:০৩

কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব রেখে পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা অন্তঃত দুই মাস পেছানোর দাবি তুলে হঠাৎ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করেছেন একদল পরীক্ষার্থী। এ সময় তারা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব রেখে পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন তারা।

রোববার (২২ জুন) দুপুর ১টার দিকে আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ জন পরীক্ষার্থী মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সামনে যান। এ সময় ‘সুরক্ষা না পরীক্ষা, পরীক্ষা পরীক্ষা’—এমন স্লোগান দিতে থাকেন।

দেখা গেছে, প্রথমে তারা মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন। সেখানে শিক্ষাবোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা সবাই একসঙ্গে গিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার দাবি তোলেন, যাতে আপত্তি জানান কর্মকর্তারা। এরপর তারা মিছিল নিয়ে বোর্ডের মূল ফটক পার হয়ে সামনের চত্বরে ঢুকে পড়েন।

বিজ্ঞাপন

তখন শিক্ষাবোর্ডে কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে প্রবেশের ফটকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সামনের চত্বরে বসে পরীক্ষার্থীরা প্রায় এক ঘন্টারও বেশিসময় ধরে স্লোগান দেন। এরপর বের হয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে এর সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষাবোর্ডের একজন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গিয়ে তাদের দাবির বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানোর আশ্বাস দেওয়ার পর বিকেল ৪টার দিকে তারা চলে যান।

শিক্ষার্থীরা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম সরকারি মডেল কলেজের পরীক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় পরীক্ষা নিয়ে আমাদের কেন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে? তিন ফুট দূরত্বে পরীক্ষার্থীদের বসানোর কথা বলা হয়েছে। আমরা এটা মানি না। আমাদের আগের নিয়মে বসতে দিতে হবে। আমরা যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাব, গেইট দিয়ে ঢোকার সময় ভিড় হয়, অভিভাবকদের জটলা হয়- তখন আমরা করোনায় আক্রান্ত হবো না? তাহলে শুধু পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর কেন এত কড়াকড়ি?’

উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এবার তিন ফুট দূরত্বে পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসের নির্দেশনা দিয়েছে আন্তঃবোর্ড। এছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্র সংশ্লিষ্টদের ও শিক্ষার্থীদের জন্য সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার অবস্থা এমন যে, এখন পরীক্ষা দেওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই। আমরা উদ্বিগ্ন, আমাদের অভিভাবকরা টেনশনে আছেন। কোনো পরীক্ষার্থী এ অবস্থায় পরীক্ষা দিতে চায় না। একজন পরীক্ষার্থীও যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাকে কী শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা ফিরিয়ে দিতে পারবেন? আমাদের দাবি হচ্ছে, পরীক্ষা দুই মাস পেছাতে হবে। তখন করোনা পরিস্থিতি দেখে তারপর আবার রুটিন দিতে হবে।’

এদিকে ফটকে তালা ঝুলিয়ে পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে শিক্ষাবোর্ডে সেবা নিতে আসা লোকজন ভোগান্তিতে পড়েন। জরুরি প্রয়োজনে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বের হতে পারেননি।

শিক্ষাবোর্ডে আসা এইচএসসি পরীক্ষার্থীর এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার প্রিপারেশন নেওয়া শেষ। চারদিন পর পরীক্ষা শুরু হবে। এ অবস্থায় পরীক্ষা পেছালে আমাদের সন্তানদের মনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তাদের পড়ালেখা এবং পরীক্ষার প্রতি অনীহা চলে আসবে। করোনা পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে পরীক্ষা পেছাতে হবে। মাত্র ২০-৩০টা ছেলে এসে দাবি জানানো মানে সেটা কোনোমতেই লাখ, লাখ পরীক্ষার্থীর দাবি নয়।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকজন পরীক্ষার্থী শিক্ষাবোর্ডের সামনে এসে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা একজন ডেপুটি কন্ট্রোলারকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাদের বুঝিয়ে বলেছেন যে পরীক্ষা পেছানোর বিষয়টি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের হাতে নেই। তবুও আমরা তাদের দাবি মেইল করে আন্তঃবোর্ডে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। এখন মন্ত্রণালয় যেভাবে সিদ্ধান্ত দেয় সেভাবে হবে। বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর তারা চলে গেছে।’

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

এইচএসসি পরীক্ষা চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর