ঢাকা: গত বছরের জুলাই-আগস্টের পর নতুনভাবে গায়েবি মামলার সংস্কৃতি দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশকে এক ধরনের গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, এতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এর পরিবর্তন আনার জন্য অর্থ উপদেষ্টা বাজেটে কিছুই রাখেন নি। বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় নয়, পুরো সরকার ব্যবস্থাকেই কাজ করতে হবে।
রোববার (২২ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর বাজেট সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংস্থার সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
জিল্লুর রহমান বলেন, “পরশু চট্টগ্রাম থেকে একজন জানালেন, তার নামে আরেকটা মামলা হয়েছে…হত্যা মামলা। ১১০ জন আসামি, উনি ৯৫ নম্বর। এভাবে গায়েবি মামলা হওয়ায় কে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, সেটি আলাদা করতে পারছি না। আমরা একটা ‘ব্ল্যাঙ্কেট সাসপিশন’র (সামগ্রিক সন্দেহ/একজনের অপরাধে সবাইকে সন্দেহ) পর্দা পুরো সমাজের ওপর ঢেলে রেখেছি। এ অবস্থায় সবাই হাত গুটিয়ে বসে থাকা ও ভুক্তভোগী হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।”
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিচার বিভাগসহ প্রতিটি মন্ত্রণালয় যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে হবে না।
বাজেট প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অনেকে বলছেন যে, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে চারজন অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। তারপরও কেন গতানুগতিক বাজেট হলো? আমি মনে করি, উপদেষ্টা পরিষদের সবাই অর্থনীতিবিদ হলেও ব্যতিক্রম কিছু হতো না। কারণ, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে যে সাহস দেখাতে হয়, সেটির জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
সংলাপে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এই বাজেটে মানুষের প্রতাশার প্রতিফলন ঘটেনি। সরকারও মানুষের কথা চিন্তা করে না। মানুষের কথা শুনে মনে হছে নির্বাচন ছাড়া প্রতাশা মিটবে না। সেই কারণে সবার আগে চাই নির্বাচন।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, ‘আমরা অনেক অস্বস্তিকর সময় পার করছি। বর্তমানে আমরা দেখছি খুব সুন্দর সুন্দর মডেল তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে একটা মডেল হচ্ছে, কেউ লুট করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই লুটের টাকা আবার ব্যাংকে পৌঁছে দিয়ে আসে। ব্যাংকগুলো লুট করেছে, আর আমরা তার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি চড়া সুদহার দিয়ে। আমার থেকে আপনি (সরকার) বাড়তি টাকা নিয়ে এই চুরির টাকার ভর্তুকি দেবেন, এটা হয় না।’ তিনি বেলন, ‘এখন পর্যন্ত একটা ব্যাংকের কর্মকর্তার জেল হয়নি, একজন গ্রাহকেরও (দোষী) জেল হয়নি। কারণ, যার কাছে টাকা, যে যত বড় চোর, সে তত বড় স্বচ্ছ—এটাই আমরা প্রতিফলন দেখছি।’