ঢাবি: কপ-৩০ সম্মেলনের জন্য Refugee and Migratory Movement Research Unit (RMMRU) কর্তৃক প্রণীত ‘A Template for Climate Vulnerable Forum (CVF) Countries to Manage Internal Displacement’ শীর্ষক টেমপ্লেটের খসড়া আন্তর্জাতিক মডেল হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (২৩ জুন) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনার তিনি এই কথা বলেন।
রিজওয়ানা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি মোকাবেলায় রামরু’র প্রণীত নির্দেশিকা দেশের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এটি বিশ্বব্যাপী ৬৯টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্যও কার্যকর হতে পারে।’
তিনি এ কার্যক্রমের জন্য ‘রামরু’কে ধন্যবাদ জানান এবং সহায়তা প্রদানকারী আইওএম (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা)-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়য়ে দ্রুত অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা ফারুক ই আজমেকে ধন্যবাদ জানান রিজওয়ানা হাসান।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই গাইডলাইনটি ‘ডিজাস্টার স্ট্যান্ডিং অর্ডার’-এর (এসওডি) সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে, যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কার্যকর হবে।
বাংলাদেশের জন্য এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশের উদাহরণ আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই নির্দেশিকায় প্রতিরোধমূলক (প্রিভেন্টিভ) এবং তাৎক্ষণিক সাড়া (রেসপন্স)- উভয় ধরনের কাজের কথা বলা হয়েছে।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি যখন দায়িত্ব নেই, তখন বন্যা পূর্বাভাসের কাজ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে করেছিলাম। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বড় বড় মেগা প্রকল্পে আমরা বিনিয়োগ করি, কিন্তু জলবায়ু ও আবহাওয়াভিত্তিক প্রস্তুতিতে কতটা বিনিয়োগ করি সেটা ভেবে দেখা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাওর অঞ্চল ও তিস্তা এলাকায় বারবার যে বন্যা হয়, তার জন্য আমাদের পূর্বাভাস ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী? মূল কাজগুলো আমরা যদি জাতীয় পর্যায়ে না করি, শুধু বড় প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করি, তাহলে কখনোই প্রস্তুত থাকতে পারব না।’
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নদীর পাড় রক্ষা করতে ৮ কোটি টাকা প্রয়োজন, কিন্তু সেখানকার সম্পদের বাজারমূল্য হয়তো ২ কোটি টাকা। তাহলে কি ৮ কোটি টাকা খরচ করা উচিত? কিন্তু যে ব্যক্তির একমাত্র সম্পদ সেটি, তার জীবনের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করব? আমরা যখন বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলি, তখন এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সমস্যা আমাদের দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তার ফলে জটিল অবস্থায় চলে গেছে যেমন ধন ভবদহ জলাবদ্ধতা। আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি এর একটা দীর্ঘ একটা চিরস্থায়ী সমাধান দিতে কিন্তু একটা চিরস্থায়ী সমাধান তো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা হয়তো প্লান করে গিয়ে একটা প্রকল্প চূড়ান্ত নকশা করে দিয়ে যেতে পারব কিন্তু পরে ওটা সঠিক বাস্তবায়ন হবে কিনা সেটা আশা করি হবে সেটার একটা বড় চ্যালেঞ্জ থেকে যায়।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এই গাইডলাইন কেবল কাগুজে দলিল নয়, এটি বৈষম্য দূরীকরণ ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আশা করি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দ্রুততার সঙ্গে এই কাজগুলো এগিয়ে নিবে।’
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, এই টেমপ্লেটের ব্যবহারিক উপযোগিতা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশগত কারণে বাস্তুহারা মানুষদের পুনবার্সনের ক্ষেত্রে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি যথেষ্ট বিস্তৃত, আন্তর্জাতিক কাঠামো প্রদানের জন্য উপযুক্ত এবং একটি অনুশীলনমূলক ডকুমেন্ট।
তিনি বলেন, কমিউনিটি নলেজের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত যে কোন গবেষণাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই টেমপ্লেট তৈরিতেও সেটি অনুসরণ করা হয়েছে। এজন্য এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সময়ের সঙ্গে এটি হালনাগাদ করা সম্ভব। এই টেমপ্লেট নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ বৃহত্তর পরিসরে কাজ করলে দেশের মানুষ অনেক উপকৃত হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
এ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান এবং সঞ্চালনা করেন ড. তাসনিম সিদ্দিকী, নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), রামরু, এবং অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক, মাননীয় উপদেষ্টা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, আই ও এম এর চিফ অব মিশন লেন্স বনেউ, ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান।